"মুসলিম যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য”বইটির ভূমিকা: الكن يا رب العالمين والصلاه والسلام على أشر الأنبياء والمرسلينه সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব জাহানের রব, দরুদ ও সালাম সকল নবী ও রাসূলদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিতদের প্রতি। رب اشرح لي صدريه وير لي أمري واحلل عقدة من لساني يفقهواوليه “হে আমার রব! আমার বুক প্রশস্ত করে দাও। আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লােকেরা আমার কথা সহজে বুঝতে পারে।” (সূরা ত্বোহা : ২৫-২৮) হে আল্লাহ! হে আদম ও ইব্রাহীম (আ.) এর শিক্ষক! আমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দাও, যার দ্বারা আমরা উপকৃত হতে পারি। আমাদেরকে যা কিছু শিখিয়েছে তার দ্বারা উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করাে। তুমি আমাদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দাও। আমরা সকল অবস্থায় তােমার প্রশংসা জ্ঞাপন করি এবং যারা জাহান্নামী তুমি আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করাে না। বিশ্বে যুব সমাজের অবস্থার আলােকে বর্তমান মুসলিম যুব সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হওয়া উচিত এ সম্পর্কে আজ আমি আপনাদের সামনে আলােচনা করবােসারা বিশ্বে যুবকরা রয়েছে, আবার মুসলিম যুবকরাও রয়েছে। আমাদের উপর অর্পিত সাধারণ কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে; যা সকল সময়ের জন্য। আবার কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে, যা আমাদের সময়ের সাথে এবং আমাদের শতাব্দীর সাথে সম্পৃক্ত। যার ফলে এ বিষয়ে একান্তভাবে আলােচনা করা আমাদের কর্তব্যও বটে। আমাদের যুব সমাজই আগামীর সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাতা এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ার কারিগর। তাই বিষয়টি সম্পর্কে বিষদ আলােচনার আবকাশ রয়েছে। মুসলিম কাকে বলে? মুসলিম হল সারা দুনিয়ার সেরা মানুষ, সে চিরন্তন রিসালাতের অধিকারী, অনুসরণকৃত নবীর অনুসারী, নবীগণের রেখে যাওয়া দ্বীন ইসলামের অনুসারী; যা হল পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (Complite cod of life)। যে দ্বীন হল সকল দ্বীনের সমন্বিত রূপ এবং সকল দ্বীনের সারাংশ। যে দ্বীনকে মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীন তার বান্দাদের জন্য পরিপূর্ণ করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্দুল আলামীন বলেন, اليوم أت كه ديته وأثنت عليه يتمتي ورضي له الإسلام ئاه “আজ আমি তােমাদের জন্য তােমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামতসমূহ তােমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তােমাদের জন্য ইসলামকে তােমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।” (সূরা মায়েদা : ৩)। মুসলিম হল সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.) এর রিসালাত ও কোরআনের রিসালাতকে চিরদিন বহন করার জন্য রাজি হয়েছেন। যৌবনের প্রারম্ভকালে যুবকগণ যুবকগণ তাদের জীবনের সকল প্রকার ইচ্ছা ও চাওয়া পাওয়ার অন্তর্বর্তীকালে অবস্থান করায় তাদের মধ্যে এক উপচে পড়া শক্তি এবং বিপ্লবের প্রাণশক্তি দেখা যায়। দুপুরের সময় সূৰ্য্য যখন মধ্য আকাশে অবস্থান করে, তখন সূৰ্য্য সবচেয়ে বেশি গরম ও শক্তিশালী হয়ে উঠে। তেমনিভাবে যুবকগণও তাদের যৌবনের এ প্রারম্ভকালে জীবনের সবচেয়ে বিপ্লবী সময়কাল অতিবাহিত করেন। এ সময়ের গুরুত্ব এখান থেকেই উপলব্ধি করা যায়। এ সময় হল এমন এক সময়, যে সময়ে একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে, প্রচেষ্টা চালাতে এবং দায়িত্বের বােঝা বহন করতে সক্ষম। এজন্যই যুগে যুগে দাওয়াত এবং রিসালাতের গুরু দায়িত্ব এই যুবকদের উপরই অর্পিত হয়েছিলাে।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।