পরিবর্তন ও প্রত্যাবর্তন" বইটির 'কিছু কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ আমি একজন নগণ্য মানুষ। কোটি মানুষের ভিড়ে এক কোনাে সংখ্যা নয়। তবে জাতিগত যে পরিচয়, তাতে একই অনেককে প্রতিনিধিত্ব করে। মুসলিম হিসেবে আমি একটি বিশেষ শ্রেণিভুক্ত। এই শ্রেণির নাম ইংরেজি শিক্ষিত দ্বীনদার সম্প্রদায়। এ নামটি হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. দিয়েছেন। তিনি পুরাে মুসলিম জাতিকে দুটি ভাগ করেছেন। একটি ইংরেজি শিক্ষিত দ্বীনদার সম্প্রদায়। অন্যটি আলেম সম্প্রদায়। দুটি শ্রেণির বৈশিষ্ট্য এবং আচার-আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভিন্নতার সীমা কমিয়ে এনে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেও সহজে জাত পরিবর্তন হয় না। যারা সত্যিই জাত পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে ডা. আব্দুল হাই রহ., হযরত খাযা আযীযুল হাসান মাজযূব রহ. উল্লেখ্য। আর এখন আধুনিক জটিল পৃথিবীতে বসবাস করেও যারা এ কাজটি সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রফেসর হযরত মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান দামাত বারাকাতুহুম। আমি এই ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব এবং সমকালীন প্রখ্যাত বুযুর্গ প্রফেসর হযরতের সান্নিধ্য লাভের সুযােগ পেয়েছি। তাকে পাওয়ার ঘটনাই এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের অতীত বেশিরভাগই খারাপ। খারাপ কেউ মনে করতে চায় না। ভুলে যেতে চায়। তবে ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা সহজ না। এটা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। সে কেবল ভুলে থাকতে চেষ্টা ছিল না। পাশ্চাত্যের পণ্ডিতদের বিজ্ঞান-দর্শন আর সামাজিক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-সাধনাই ছিল শিক্ষার মূল উপকরণ। সঙ্গতকারণেই এ শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যক্তির চিন্তা-চেতনায় ইসলামী মূল্যবােধের বিকাশ ঘটানাের কোনাে সুযােগ ছিল না। তবু আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে আমাকে তার এক প্রিয় বান্দার উসিলায় ইসলামের পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। সে পথ-পরিক্রমাই এ গ্রন্থের মূল অবলম্বন। কেবলই স্মৃতিচারণ কিংবা অতীত-গৌরব বর্ণনা এ বইয়ের উদ্দেশ্য নয়; বরং এখানে অতীতের পঙ্কিলতাকে ছাপিয়ে ইসলামী দর্শনে নিজেকে আবিষ্কার করার নতুন উপলব্ধি ও চেতনাকেই প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত অনেকের মনে নতুন ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে। হয়তাে তারা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিবেন— এ-ই প্রত্যাশা।