বিষাদ-সিন্ধু' গ্রন্থের ভূমিকা ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা মীর মশাররফ হোসেনের লেখা ছোট-বড় গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৪২ খানা। এর মধ্যে 'বিষাদ-সিন্ধু' গ্রন্থটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং জনপ্রিয়। কারবালার বিষাদময় মর্মান্তিক কাহিনী নিয়ে রচিত 'বিষাদ-সিন্ধু' পাঠ করে আবেগে আপ্লুত হয়নি এমন বাঙালি মুসলমান পাঠক খুঁজে পাওয়া ভার। তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি কোনটি? সমালোচক মহলে প্রশ্নটি থাকলেও তাঁর খ্যাতি যে মূলত 'বিষাদ-সিন্ধু'র জন্যই একথা সর্বজনস্বীকৃত। তবে বিভিন্ন সমালোচক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে 'বিষাদ-সিন্ধু' গ্রন্থটির স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন- এটি ধর্মীয় গ্রন্থ, আবার কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, এটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। গ্রাম বাংলার লক্ষ লক্ষ মুসলমান গ্রন্থটিকে ধর্মীয় অর্থেই মর্যাদা দিয়ে থাকেন। উপন্যাস পাঠ যাদের মনকে পাপবোধে আচ্ছন্ন করে উক্ত গ্রন্থটি পাঠ করে তাঁরা পুন্যের স্পর্শ লাভ করেন। অন্যদিকে যাঁরা এটি এতিহাসিক গ্রন্থ তথা ইসলামের অভ্যুদায়িক ইতিহাসের অবলম্বনের লেখা হয়েছে বলে মনে করেন কোন কোন সমালোচক তা মেনে নিতে রাজী নন। তাঁরা এটিকে ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করতেও অস্বীকৃতি
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।