হেমন্তকুমারী বাঙালিকন্যা, হিন্দি পত্র-পত্রিকার জগতে প্রথম নারী-সম্পাদক (সুগৃহিণী’ ১৮৮৮)। তার উদ্যোগেই পঞ্জাবে তৈরি হয় প্রথম নারীজাগরণ-মঞ্চ। কলকাতার নারী-পরিচালিত পত্রিকা “অন্তঃপুর’-এরও সম্পাদক তিনি। যেমন হিন্দি, তেমনই বাংলা— দুয়েতেই সমান দক্ষতা, তিনি সব্যসাচী লেখক। হেমন্ত সার্থক জননী, সার্থক শিক্ষক, সার্থক প্রশাসক। তিনি সুবক্তা আগ্রা, রতলাম, শিলং, শ্রীহট্ট, কলকাতা, পাতিয়ালা, দেরাদুন জুড়ে তার কর্মক্ষেত্র; দুরন্ত গতিতে ছুটেছে তার অশ্বমেধের ঘােড়া। শারদামঞ্জরী শ্রীহট্টের পাড়াগাঁয়ের বিদ্রোহী কিশােরী বধূরূপে শিলঙে এসে জীবনযুদ্ধে আরও জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষকতা ও সমাজসেবায় তার ভূমিকা অনন্য। শারদামঞ্জরী সুলেখক, সুবক্তা লীলা। মজুমদার শৈশবের স্মৃতিসূত্রে (পাকদণ্ডী) লিখেছেন, “দিদিমা মানুষটি অনন্য সাধারণ ছিলেন। ...একদিকে গোঁড়া ব্রাহ্ম, আর অন্যদিকে সমুদ্রের মতাে উদার। শিলঙের ব্রাহ্মদের সেকালের জীবন নিয়ে সুন্দর। একখানি বইও লিখেছিলেন। লেখিকার মতােই সরল, বলিষ্ঠ, অসঙ্কোচ সুন্দর লেখা।” অঞ্জলি লাহিড়ীর মাতামহী শারদামঞ্জরী দত্ত, পিতামহ ডা. সুন্দরীমােহন দাস। তুখােড় ছাত্রনেতা ও সুবক্তা ছিলেন অঞ্জলি। দলের নির্দেশে দুর্গম পাহাড়ে ও বিচিত্র পরিবেশে ছিল তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। দলিতের বন্ধু তিনি, নিরন্নের সুহৃদ, অসুস্থ মানুষের ভরসা, স্বজনহীনের স্বজন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে উত্তর সীমান্তে তার সেবাপরায়ণতা কিংবদন্তীর মতাে। তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা। কথাকার অঞ্জলি নিজেকে পরিচয় দেন ‘মেঘালয়ের দুরন্ত ঝড়’ রূপে, হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাকে ডাকতেন ‘তােভারিশ (কমরেড) বলে। এই তিন দৃপ্ত ও দীপ্ত ব্রাহ্মতনয়ার অঙ্গন ও ভুবন নিয়ে উষারঞ্জনের কথামালা যেমন স্বাদু, তেমনই তথ্যগর্ভ।