এই নদী-নালা খাল-বিল ভরা দেশ, এইখানে পৌঁছিয়া বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে একটা আশ্চর্য রকম মিতালি পাতাইয়াছে। পলিমাটির নরম ভূখণ্ড চির-যৌবন, অথচ সংযতা রমণীর মতো নানা ক্রিয়া-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখিয়া, ক্রমাগত রভস-রঙ্গ-ব্যাকুল সমুদ্রের নিকট হইতে আত্মগোপনে তৎপরা; অক্ষয়-বীর্য সমুদ্রের উদ্দাম বাসনা-তরঙ্গে নিজেকে গলাইয়া আত্মহারা না হইবার জন্যই সে অন্য রূপে, অন্য প্রকারে সাজিয়াছে; নিজ অন্তর্গত মাতৃ-মমতায় সে তাহার প্রসূত ভুবনের নানা লীলা- রূপ দেখাইয়া রতিরঙ্গপ্রবণ সমুদ্রকে শান্ত রাখিতে প্রয়াসিনী, অথচ পুরুষ- বিরহিতা কোনও যোগিনী হইবার বাসনাও তাহার আদৌ নাই। মহাসমুদ্রের জীবনান্দোলনে সৃষ্টি ভুবন লইয়া বসুন্ধরা এইখানে যেন প্রাত্যহিক সংসার-ধর্মে বাঁধা পড়িয়া গিয়াছে, তাই স্বামী-সোহাগের বিষয়টি স্বাভাবিক হইলেও, তাহার সেইদিকে সর্বদা ব্যাপৃত থাকিবার অবকাশ নাই; ফলে এই প্রকৃতি ও পুরুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহও স্বাভাবিক হইয়া উঠিয়াছে। এই সূত্র ধরিয়াই তাহাদের প্রেম-রঙ্গ-সঞ্জাত সম্পর্ক সহজ দাম্পত্যের রূপ পরিহার করিয়া অনেকটা আদিম সংঘর্ষ-সংগ্রামের পর্যায়ে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। দেশয়েই নিজ নিজ তাচ্ছা ও বাসনা লইয়া আলি।