ভূমিকা অশেষ করুণাময় ঈশ্বরের কৃপায় বহু সাধনায় এবং পরিশ্রমে শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ প্রকাশিত হইল । ভগবান কৃষ্ণদ্বৈপায়ন সর্ব্বপুরাণের সার ও সর্বোত্তম সব গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ করিবার বাসনাতেই এই মহাপুরাণ প্রণয়ন করেন, ইহা তাহারই পদ্যানুবাদ । বস্তুতঃ ইহা পাঠ করিলে স্পষ্টতই বুঝিতে পারা যায় যে, ইহাতে তিনি যত পরিশ্রম, যত আয়াস, যত যত্ন ও যত অধ্যবসায় স্বীকার করিয়াছিলেন, অন্যান্য পুরাণ বা উপপুরাণাদি সঞ্চালনে তিনি কখনই তত পরিশ্রম, তত আয়াস, তত যত্ন ও তত অধ্যবসায় স্বীকার করেন নাই। মানবজাতির কল্যাণকামনায় ব্যাসদেব মহাভারত এবং অন্যান্য পুরাণ রচনা করিয়াছিলেন কিন্তু ইহাতে তাঁহার মন তৃপ্ত হইল না । অবশেষে মহর্ষি নারদ ব্যাসদেবের অতৃপ্ত মনের কথা শুনিয়া শ্রীহরির গুণ ও লীলা বর্ণনা করিতে বলিলেন । ব্যাসদেবের জীবনে অসংখ্য কীর্ত্তি স্থাপনের মধ্যে বেদ-বিভাগ অন্যতম । ব্যাসদেবের পূর্ব্বে সমস্ত বৈদিক মন্ত্র ছিল পদ্য, গদ্য এবং গীতের মিশ্রণে রচিত। সর্বপ্রথম ব্যাসদেবই এগুলিকে একত্র করিয়া বিভিন্ন বেদে বিভক্ত করেন । বেদ-বিভাগ এবং মহাভারত রচনা ব্যতীতও বেদব্যাস আঠারটি পুরাণ রচনা করিয়াছিলেন । বস্তুতঃ শ্ৰীমদ্ভাগবত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পাঠ করিলে আর বেদ পাঠে আবশ্যক করে না, সংহিতা পাঠে প্রয়োজন থাকে না এবং অন্যান্য পুরাণাদি শাস্ত্র পাঠের কোনও আবশ্যকতা পরিদৃষ্ট হয় না । যাহা পাঠে হৃদয়ের তামস অন্ধকার বিদূরিত হইয়া বিমল জ্ঞানজ্যোতিঃ প্ৰতিভাত হয়, যাহা পাঠ বা শ্রবণ করিলে মানব শোক, তাপ, বিষাদ প্রভৃতি পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক আনন্দ রসাভিসিঞ্চনে উৎফুল্ল হয়, যাহার নিগূঢ় তত্ত্ব ও পরম রহস্য মর্মে মর্ম্মে সংস্কৃষ্ট হইলে ধর্ম্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ এই চতুর্ববর্গ ফল লাভ হইয়া থাকে, একবার যাহার অমৃতময় রসাস্বাদন গ্রহণ করিলে এই সংসারের কোন দ্রব্যে স্পৃহা থাকে না । কোন্ বুদ্ধিমান সেই কলুষনাশিনী, পরামৃতদায়িনী, ব্রহ্মপ্রতিপাদনী ভাগবত সুধার আদর না করিবেন ? বস্তুতঃ ভক্তিতত্ত্ব, বৈরাগ্যতত্ত্ব, মোক্ষতত্ত্ব, ব্রহ্মতত্ত্ব এ সকল জানিবার বাসনা থাকিলে একমাত্র শ্রীমদ্ভাগবতই তাহার অবলম্বনীয় গ্রন্থ। একমাত্র ভাগবতের মর্ম্ম হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলে চতুর্বেদের সারমর্ম্ম পরিজ্ঞাত হইতে পারে । আমরা এই কলি-কলুষনাশিনী রসময়ী সুধা অল্পজ্ঞানী ব্যক্তিগণের হৃদয়ক্ষেত্রে অভিসিঞ্চন করিবার মানসে মূল গ্রন্থ হইতে, বহু প্রাচীন গ্রন্থের এবং জ্ঞানীজনের সাহায্যে পদ্যছন্দে অনুবাদ করিয়া প্রকাশ করিলাম । এখন ভগবদ্ভক্তি-পিপাসুগণ সাদরে গ্রহণ ও পাঠ করিলেই সফল প্রযত্ন হইব ।