বাবা ছিলেন তখন সি.আই.ডি ইন্সপেক্টর। ঢাকায় মালিবাগে তার অফিস ছিলো, আর আমরা থাকতাম মালিবাগ বাগানবাড়িতে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্রাইমারি স্কুল থেকে আমার শিক্ষার হাতেখড়ি। বাবার চাকুরির কারণে মুক্তিযুদ্ধেরও বেশ আগে ঢাকা ছাড়ি। তাই ঢাকার প্রতি আমার আগাগোড়া বেশ একটা টান ছিলো। বড় বড় শহর আমার পছন্দ। উঠতি বয়সে ঢাকা যাবার অনেক পরিকল্পনা করেছি কিন্তু সফল হইনি। বড় আপা ঢাকায় থাকেন। চাকুরি করেন; তাই ঢাকা যাবার আগ্রহটা আরও বেশি ছিলো। কিন্তু পরিবারের সবাই কেন জানি আমাকে বড় আপার ঠিকানা বা সব রকম তথ্য থেকে দূরে রাখতো! ভাবতাম, সবই হয়ত আমার বাউন্ডুলেপনার কারণে হবে। পারিবারিক এই দূরত্ব আমাকে অনেক কষ্ট দিতো। বড় আপা ঢাকায় মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে থাকেন। আসাদ গেট থেকে বেশি দূরে নয়। বাড়িটা তিনতলা এবং তিনি নীচতলায় থাকেন। জানালার পর্দার রং আর ভগ্নীপতির হলুদবর্ণের মটরসাইকেল যার নাম্বার প্লেট- 'সাস' দিয়ে। এই ছিলো আমার মনের মধ্যে গাঁথা আর একমাত্র তথ্য। ঢাকা যাবার মতো টাকা কোথায় পাবো? তাছাড়া লেখাপড়া ফেলে পালিয়ে গেলে বাবা কি করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনের কথা মনে রেখেই অপেক্ষায় জাল বোনা। এমনি করেই পার হয় দিন।