"অহংকার সর্ব রোগের মূল ও তার চিকিৎসা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। আর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হােক মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। পৃথিবীর জীবন মানুষের জন্য ক্ষণস্থায়ী। আর পরকালের জীবন হলাে অফুরন্ত ও অনন্তকালীন জীবন। এদিকে ইশারা করে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর তােমাদের সকলকে (কর্মের) পুরােপুরি প্রতিদান কেবল কেয়ামতের দিনেই দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানাে হবে। সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। -(আলে ইমরান (৩), আয়াত : ১৮৫) আর যারা সকর্ম করবে অবশ্যই এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তাদের সঙ্কর্মের প্রতিদান নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ হলাে অহংকার। এটি মারাত্মক ব্যাধি। যার মাঝে অহংকার নামক রােগ থাকবে সে কোনােদিন সফলকাম হতে পারবে না। কেননা অহংকারকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে অহংকারী সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- “তােমরা জমিনের উপর দম্ভ ভরে চলাে না।” অহংকারী ব্যক্তির অহংকার তার কাজকর্ম, কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও চলাফেরা প্রকাশ পায়। অনেক ক্ষেত্রে সে অন্যান্য মানুষকে মানুষই মনে করে না। অহংকারের কারণে অনেক সময় গুনাহ করতে দ্বিধা করে এবং ছওয়াবের কাজের দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। তাই সে কখনই আল্লাহর ওলী হতে পারে না। অহংকারের কারণে অনেক ওলীর নিকট থেকে আল্লাহ তায়ালা ওলায়েতের দরজা ছিনিয়ে নিয়েছেন। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, অহংকার সর্বরােগের মূল এবং পতনের মূল কারণ। বর্তমান সময়ে অহংকারকে কোনাে বিষয়ই মনে করা হয় না। বরং অহংকারকে ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে এবং দলে দলে গােমরাহ ও ধ্বংস হচ্ছে। সমাজের এহেন পরিস্থিতি অবলােকন করে নাদিয়াতুল কুরআন লাইব্রেরীর উবাইদুল্লাহ ভাই, শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রহ.এর “উম্মুল আমরায” গ্রন্থটি অনুবাদ করে প্রকাশ করার প্রয়ােজনীয়তা অনুধাবন করেন তীব্রভাবে। আলহামদুলিল্লাহ! গ্রন্থটি প্রকাশের দ্বারপ্রান্তে। সম্পাদনার বােঝা কাঁধে নিয়ে আমারও গ্রন্থটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া হয়েছে একাধিকবার। বেশ উপকৃত হয়েছি। তাই আমি আশাবাদি আলেম-উলামা-তলাবা এবং সর্বশ্রেণীর মানুষ এ গ্রন্থটি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা গ্রন্থটিকে কবুল করুন। (আমীন)
(২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ – ২৪ মে ১৯৮২) তিনি ছিলেন দেওবন্দি ধারার একজন হানাফি পণ্ডিত। তিনি হাদিসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তার চাচা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ছিলেন সংস্কারমূলক আন্দোলন তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ফাজায়েলে আমল নামক গ্রন্থের লেখক। এটি উর্দুতে লিখিত হলেও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[১][২][৩] তার জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে হায়াতে শায়খুল হাদিস ও আপবীতি। মুহাম্মদ জাকারিয়া ১৮৯৮ সালে কান্ধলা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া। গাঙ্গোহ নামক স্থানে তিনি তার পিতার মাদ্রাসায় দশ বছর পাঠগ্রহণ করেন। ১৯১০ সালে তিনি মাজাহির উলুম শাহারানপুর মাদ্রাসায় শিক্ষালাভের জন্য আসেন। এই মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে সম্পর্কিত ছিল। তিনি তার পিতা ও মাওলানা খলিল আহমেদ শাহারানপুরির কাছ থেকে হাদিস শিক্ষালাভ করেন। ১৯১৫ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি এখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেওবন্দ আন্দোলনের প্রসারে তার ভূমিকা রয়েছে।