"শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ গোলাম মুরশিদ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ গােলাম মুরশিদ মূলত গবেষক। গবেষণামূলক অভিসন্দর্ভ তথা গবেষণাগ্রন্থের লেখক হিসেবেই তিনি সুপরিচিত। তার ত্রিশটি গ্রন্থের মধ্যে প্রবন্ধ-সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। সেখান থেকে সব দিক বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ এই গ্রন্থের জন্য বাছাই করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত ভালোগুলােকে বাছাই করা হয়েছে, সেই অর্থে এগুলােকে তার শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ বলা যায়। প্রবন্ধগুলােকে আটটি ভাগে বিভক্ত করে বিন্যস্ত করা হলাে, যথা: ভাষাবিষয়ক, সাহিত্যবিষয়ক, সমাজবিষয়ক, সংস্কৃতিবিষয়ক, মানবীবিষয়ক, মনীষাবিষয়ক, আত্মজৈবনিক এবং রম্যবিষয়ক। গােলাম মুরশিদের মৌলিক চিন্তার মূল বিন্দুগুলাে যাতে স্পর্শ করা যায়, প্রবন্ধ বাছাইয়ের সময়ে তা মনে রাখা হয়েছে। অভিন্ন লক্ষ্যে বাংলা ভাষা বিষয়ে চারটি প্রবন্ধ, বাংলা সাহিত্যের প্রধান চার ব্যক্তি বিদ্যাসাগর-মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্কে আটটি প্রবন্ধ, উনিশ শতকের সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে চারটি প্রবন্ধ, গান ও অভিনয়কলাসহ বাঙালি সংস্কৃতির কয়েকটি দিক নিয়ে লেখা তিনটি প্রবন্ধ, বাংলার নারীজাগরণ ও নারীসমাজের বিকাশ সম্পর্কিত পাঁচটি প্রবন্ধ এবং বাংলার বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করা হয়েছে এমন সাতটি প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে সংকলিত হলাে। এ ছাড়া দুটি আত্মজৈবনিক এবং দুটি রম্যরচনাও এই সংকলনে জায়গা পেয়েছে।
বাংলাদেশের গবেষণামূলক বই লেখকদের ক্ষেত্রে অন্যতম নাম ‘গোলাম মুরশিদ’। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তাঁর জানাশোনার পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাও উল্লেখযোগ্য। বছরের পর বছর ধরে তিনি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ রচনা করে গেছেন, তাঁর ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটিতে বাঙালি সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝে থাকি এবং যা আমাদের জানার গণ্ডির বাইরে, তার সবটাকেই এক মলাটে বাঁধাই করতে পেরেছেন তিনি। ১৯৪০ সালে বরিশালে জন্ম নেন এই গবেষক ও লেখক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়; গবেষণার ছাড়াও বেতার সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ১৯৮৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। গবেষণার মাধ্যমে অতীতকে আবিষ্কারের নেশা তাঁর প্রবল। গোলাম মুরশিদ এর বই সমগ্র পড়লে বাংলা সাহিত্যের কিছু লেখকের সমৃদ্ধ জীবনকাহিনীও জানতে পারা যায়। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা তাঁর ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’ কিংবা মাইকেল মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে লেখা ‘আশার ছলনে ভুলি’ বইগুলো এর অন্যতম উদাহরণ। নারীপ্রগতি নিয়েও তাঁর একটি বই রয়েছে- ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া’। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন বিষয়কে একটি বিশ্লেষণাত্মক ও গবেষণামূলক ইতিহাসখণ্ডে রূপ দিতে সিদ্ধহস্ত লেখক গোলাম মুরশিদ। গোলাম মুরশিদ এর বই সমূহ শুধু যে ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়েও তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং সে আগ্রহের ফসল হিসেবে বাংলাভাষী পাঠকসমাজ পেয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর একটি নির্দলীয় ইতিহাস’। এ বইয়ে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময় পরিক্রমার একটি বস্তুনিষ্ঠ ছবি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন লেখক।