ইসলাম বলতেই আমরা বুঝি কেবল নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ গুটিকয়েক ইবাদতকে। সংকীর্ণ চিন্তায় বেড়ে ওঠা সমাজে ইসলামের ধারণা এমনই সীমাবদ্ধ ও হ্রস্বীকৃত। সমাজের মানুষও ভাবে, শুধু মসজিদ-মাদরাসা নিয়ে পড়ে থাকাই ইসলামের কাজ। এভাবে সামগ্রিক জীবনব্যবস্থায় উপেক্ষিত ইসলাম আজ আমাদের চেন্তা-চেতনায়ও ভুলভাবে চিত্রিত হচ্ছে। অথচ ইসলামের গণ্ডি এমন অপ্রশস্ত নয়। ইসলাম এত ক্ষুদ্র ও স্বল্পায়তনের নয়। ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র―সর্বত্রই রয়েছে ইসলামের পূর্ণ বিচরণ। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, বিচারনীতি―সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের পূর্ণ দিকনির্দেশনা। এককথায়, মানবজীবনে চলার পথে ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ এক জীবনব্যবস্থা। কিন্তু হতভাগা মুসলিম জাতি যখন শরিয়াপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ছুড়ে ফেলে মানবরচিত জীবনব্যবস্থাকে সফলতার চাবিকাঠি বানিয়েছে, তখন দুনিয়া ও আখিরাত―উভয় ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থতা ও বিফলতার শিকার হয়েছে। আজ বিশ্বের সর্বত্রই যখন গ্লানি ও অশান্তি তাদের গ্রাস করে নিয়েছে, যখন প্রতিটি অঙ্গনেই বিশৃঙ্খলা ও হতাশার ছাপ স্পষ্টরূপে দেখা যাচ্ছে তখন দেরিতে হলেও মানবরচিত জীবনব্যবস্থার কুফল, স্বৈরাচারিতা ও অপূর্ণতা তারা অনুধাবন করতে পারছে। ধীরে ধীরে অনেকের মধ্যেই এ বোধ ফিরে আসছে যে, ইসলামই এসব সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। আর তাই বর্তমানে ইসলামের প্রতি অনেকের আগ্রহ এবং জানার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ধারণা পেতে অনেকেই এখন বিভিন্ন সোর্স ও মাধ্যম খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের এবারের আয়োজনে থাকছে ‘ইসলামি জীবনব্যবস্থা’ নামক বৃহৎ কলেবরের এ গ্রন্থটি। ব্যাপক চিন্তা ও সুদূরপ্রসারী ভাবনা থেকে বইটি বিন্যস্ত করা হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ের পাশাপাশি সময়ের মাজলুম ও অবহেলিত বিধানগুলোও দলিলের আলোকে গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। আশা করি, গ্রন্থটি ইসলাম সম্পর্কে মানুষের অনেক ভুল ধারণার মূলোৎপাটন করবে, ঘুমন্ত চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলবে এবং সামগ্রিক জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য মনোবল পুরোপুরি ফিরিয়ে আনবে। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন, আপ্লুত হৃদয়ে অবগাহন করি ইসলামের এ সরোবরে আর নতুন স্বপ্ন ও বিশুদ্ধ আকিদার চেতনায় গড়ে তুলি আগামীর ইসলামি সমাজ...
জন্ম ও পরিবার: ১৯৮৯ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর সোমবার দিনের প্রথম প্রহরে পাবনা জেলার প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে তার জন্ম। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় এ সন্তান ছোটকাল থেকেই আকর্ষণীয় অবয়ব, শান্ত প্রকৃতি ও অসাধারণ মেধাবলে সবার মন জয় করে ফেলেন। বাবা ডাক্তার ও মা গৃহিণী, দু’জনেই অত্যন্ত দীনদার ও পরহেযগার। বড় ভাই লালমাটিয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ও মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছেন। মেধা ও লেখাপড়া: জন্মগতভাবে অসামান্য মেধার অধিকারী তরুণ এ আলেম মাত্র চার বছর বয়সেই মায়ের কাছে দীনশিক্ষা ও লেখাপড়া শুরু করেন। ক্লাস ফোর পর্যন্ত প্রত্যেক পরিক্ষায় প্রতিটি বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করে সবার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। বিশেষত অঙ্কে তার মেধা ও দক্ষতা ছিলো ঈর্ষনীয় পর্যায়ের। দশ বছর বয়সে ক্লাস ফাইভ শেষ করে মাদরাসায় পদার্পন করেন। তানযীম বোর্ডে মক্তব বিভাগের কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় বোর্ডে ২য় স্থান অর্জন করেন। অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে মাদরাসার প্রাথমিক শিক্ষা পাবনাতেই সম্পন্ন করে পাড়ি জমান সুদূর যশোরে। সেখানে পেয়ে যান অসামান্য প্রতিভাধর আলেমে দীন মুফতী আ. রাযযাক দা. বা. এর সংস্পর্শ। মহান আত্মোত্যাগী এ উস্তাদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে লাগাতার চার বছর অবস্থান করে উর্দু, ফারসী, নাহু, সরফ ও মানতেকের উপর অসামান্য বুৎপত্তি অর্জন করেন। এরপর মেখল ও হাটহাজারী মাদরাসাতেও কয়েক হাজার ছাত্রের মাঝে ১ম স্থান ধরে রেখে সর্বশেষ ঢাকার বসুন্ধরা মাদরাসা থেকে মেশকাত ও দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। বসুন্ধরা বোর্ডের আওতাধীন বোর্ড পরিক্ষায় উভয় জামাতে ১ম স্থান অর্জনসহ অত্যন্ত ভালো ফলাফলের সুবাদে বসুন্ধরা মাদরাসায় তাখাসসুসাত শেষ করে উস্তাদ হিসেবে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করে ফিকহে বুৎপত্তি অর্জন করার উদ্দেশ্যে বরেণ্য ফকীহ ও মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা. বা. এর সাথে তিনি মারকাযুশ শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে চলে আসেন। এখানেও অত্যন্ত সুনামের সাথে ১ম স্থান ধরে রেখে তিন বছর ইফতা পড়ার পাশাপাশি উলূমুল হাদীসও সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন: পড়ালেখা শেষ করে মুফতী মিযান সাহেবের পরামর্শক্রমে মারকাযুশ শাইখ যাকারিয়াতেই উস্তাদ হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মেশকাত ও দাওরাসহ ইফতা, উলূমুল হাদীস, তাফসীর ও আরবী আদব বিভাগে অত্যন্ত সুনাম ও দায়িত্বশীলতার সহিত শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। লিখনী ও অবদান: ছাত্র ও কর্মজীবনে সমভাবে তৎপর প্রতিভাবান এ আলেমে দীন পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখিতেও যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর অনূদিত “গোনাহময় জীবনে তাওবার পরশ” এবং বৃহৎ কলেবরের মৌলিক রচনা “সহীহ হাদীসের আলোকে নামায”, “ইসলামী বিবাহের রূপরেখা”, “একসাথে তিন তালাক ও তার বিধান”, “শরয়ী মানদন্ডে ছবি-ভিডিও’র রূপরেখা”, “বাহরে শীর শরহে নাহবেমীর” এর পাশাপাশি দশটিরও অধিক তথ্যবহুল প্রবন্ধ ও রচনা রয়েছে। এছাড়া তিনি অনেকগুলো বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন। তিনি islamandlife.org নামক একটি ইসলামিক ওয়েবসাইটে প্রশ্নোত্তর বিভাগে কাজ করেন। তার উল্লেখযোগ্য সবচে বড় কর্ম ও অবদান হলো, বিখ্যাত “আল মাকতাবাতুল কামিলা” প্রণয়ন। এতে প্রায় দশ কোটি টাকা সমমূল্যের পিডিএফ ফাইলের আরবী, উর্দু ও বাংলা কিতাব সন্নিবেশিত করেছেন। মাকতাবাতুল আযহারের মধ্যস্থতায় তা এখন অসংখ্য আলেমের কিতাবের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: জাগ্রত চিন্তা ও উন্নত চিন্তা-চেতনার অধিকারী এ তরুণ আলেমের ভাবনা সুদূরপ্রসারী। অনুসন্ধানী মানসিকতা, ব্যাপক অধ্যায়ন ও বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি থেকে তিনি মুসলিম উম্মাহের প্রতি অসামান্য দরদ অনুভব করেন। যে কোনো মূল্যে তিনি তাদের জাগিয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। লেখনি, বক্তৃতা ও তা’লীম-তারবিয়াতের মাধ্যমে ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলার যে অদম্য আগ্রহ তাঁর, তা এককথায় প্রশংসনীয় ও যুগোপযোগী এক পদক্ষেপ। আমরা তাঁর সৎ লক্ষ্য পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করি ও তাঁর জীবনের সার্বিক সফলতা কামনা করি।