“বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ পৃথিবীতে ভালাে গ্রন্থের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বহু সুপাঠ্য ও শুদ্ধ জীবনভাবনায় ঋদ্ধ গ্রন্থ অনেক লেখা হয়েছে । কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ গ্রন্থ পড়ে গ্রন্থের ভালাে কথাগুলাের মতাে ভালাে মানুষটি হয়ে ওঠে না। ফলে গ্রন্থের থেকে মানুষ বড়াে হয়ে ওঠে। সমগ্রবিশ্বে অনুসরণীয় মানুষকে খুঁজে পেতে চায় চলমান মানুষ। মানুষ ভজলে সােনার মানুষ হবি’ সাইজীর এই কথা এক্ষেত্রে শতভাগ সত্য। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ গ্রন্থটিকে বলা যায় একটি চরিগ্রন্থ। হিন্দু জীবনী সাহিত্যের সাথে বাংলা ভাষায় যার নামটি অমর হয়ে আছেন তিনি হলেন-শ্রীচৈতন্য । বাংলা ভাষায় প্রথম জীবনী গ্রন্থ তাকে ঘিরেই চরিত হয়েছিলাে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে হিন্দু ঐতিহ্যে ঐতিহাসিক চরিত্র নির্ভর গ্রন্থ রচিত হয়ে এসেছে শুধু মানুষের প্রবল অনুসরণীয় আকাঙ্ক্ষাকে নিবৃত্ত করার জন্য। রামচরিতমানস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার ছেলেবেলা এই ধারার রচনা। বহু যুগের পুরনাে ইতিহাসের অস্বচ্ছ আয়নায় ধূসর চরিত্র নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি হয় নানা কিংবদন্তী, তৈরি হয় মিথিক্যাল কল্প কাহিনি। ফলে জাতীয় জীবনে যে চরিত্রসমূহ কোনাে নির্দিষ্ট জাতিগােষ্ঠীর বিশ্বাস ও ঐতিহ্য সাধনার চালিকা শক্তি হয়ে দাড়ায় তার নবনির্মাণের প্রয়ােজন হয়। প্রয়ােজন হয় তার থেকে আষাঢ়ে গল্পগুলাের যৌক্তিক কারণ অনুসন্ধান ও গ্রহণ-বর্জনের ভাবনা। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তেমনি এক গ্রহণ-বর্জনের জীবনী-গ্রন্থ। গ্রন্থের থেকে জীবনী গ্রন্থ মানুষের নিকট অধিক আদরণীয়। জীবনীতে খুঁজে পাওয়া যায় একজন মানুষের সাফল্য, ব্যর্থতা ও ভালাে-মন্দের ব্যক্তিভাবনা। যদিও শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে যত ধরনের গ্রন্থই রচিত হয়েছে তার প্রায় সিংহভাগই প্রগলভ ভক্তিভারে অযৌক্তিক আষাঢ়ে গল্পে ভরপুর। এগুলােকে কখনাে অপ্রাকৃত লীলা, কখনাে পুরুষােত্তম জীবনী, কখনাে কৃষ্ণস্তু স্বয়ং ভগবান ইত্যাদি ভাবনা থেকে লেখা। শ্রীকৃষ্ণ অবতার, শ্রীকৃষ্ণ ভগবান স্বরূপ এরপরও শ্রীকৃষ্ণ রক্তমাংসে গড়া দেহ নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলেন। পৃথিবীতে তাঁর অবদান, মানবজাতির জন্য মানুষরূপী কৃষ্ণের আদেশ, নির্দেশ কিরূপ সেগুলাে নিয়ে বেশির ভাগ গ্রন্থই নিরব। লেখক সম্পদ দাশ এইসব আধুনিক মানুষের চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ রচনা করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের ইতিহাস নির্ভর জন্ম সময় থেকে শুরু করে মর্তের মানুষের যেমন শৈশব, কৈশাের, শিক্ষাজীবন বর্ণাঢ্য কর্মের পরিচয় থাকে তেমন সকল পরিচয়ের প্রান্তস্পর্শী এক বাস্তব সত্যের জীবনীগ্রন্থ হয়ে উঠেছে এটি। অলৌকিক ব্যাপারগুলাের লৌকিক ব্যাখ্যা যেমন আছে তেমনি আছে ভক্তিশাস্ত্রের ব্যাখ্যাও।