বই পরিচিতি অধ্যাপক (ডাঃ) হেদায়েতুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং মনোরোগ বিদ্যা বিশেষজ্ঞ। সুদীর্ঘ পেশাজীবনে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হয়েছে অসংখ্য মণিমুক্তো। সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি তুলে ধরেছেন জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যায়কে। যাপিত জীবন সম্পর্কে তাঁর নৈব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষণ তাই শুধুমাত্র একটি সফল জীবনের প্রতিচ্ছবিই নয়, ধারণ করেছে সময়, সমাজ ও ইতিহাসকে। বিশেষ করে, দেশ বিভাগপূর্ব বৃটিশ শাসন আমলে দেশের নিভৃত পল্লীতে শৈশব- সেই সময়ে গ্রামীণ সহজ, সরল, যৌথ পরিবারের সামাজিক অবকাঠামো ও জীবন ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। আবার দেশের মফস্বল শহরে কিভাবে দানা বেঁধে উঠেছিল বৃটিশ শাসন বিরোধী খন্ড খন্ড আন্দোলন, সেই সময়ে হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক সহঅবস্থান ও বিন্যাস এবং কিশোরমনে তার প্রভাব ও চেতনার বিকাশ খুঁজে পাওয়া যাবে এই আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থখানিতে। অন্যদিকে, তরুণ বয়সে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব; এবং পরবর্তীতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মেধাবী পেশাজীবীর চাকচিক্যময় প্রবাস জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে দেশের বিপর্যস্ত চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ- সেটিও সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে এই নাতিদীর্ঘ গ্রন্থখানিতে। অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলাম তাঁর কর্মজীবনে শুধুমাত্র কর্তব্যনিষ্ঠ চিকিৎসক বা অধ্যাপক হিসেবে অতিবাহিত করেন নি বরং নির্ধারিত দায়িত্বের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন চিকিৎসা অবকাঠামো বিন্যাসে। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় অতি প্রয়োজনীয় কিন্তু অবহেলিত মনোরোগবিদ্যাকে নিয়ে এসেছিলেন মনোযোগের পাদপ্রদীপে, জনগণের সেবার দোড়গোড়ায়। শুধুমাত্র দূরদর্শিতা, পরিকল্পনা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্ব এবং দৃঢ় সংকল্প কিভাবে বৃহত্তর পরিসরে দেশের ও মানুষের সেবায় ভূমিকা রাখতে পারে- তা তরুণ পাঠক, বিশেষত তরুণ চিকিৎসক পেশাজীবীদের আগ্রহের বিষয় হতে পারে। তাই, আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ যে পাঠকেরা ভালোবাসেন, যারা বর্ণনার পাশাপাশি উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ উপভোগ করেন, যারা সময়ের কালে পরিভ্রমণ করতে চান তাঁদের কাছে বইটি সমাদৃত হবে বলেই ধারণা করা যায়।