"হিন্দু ধর্ম রহস্য ও দেবলীলা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: বিগত শতাব্দীর হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠ সাধক ও সংস্কারক শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রী ঠাকুর বালক ব্রহ্মচারী মহাশয়ের মন্তব্য হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক ঠাকুর শ্রী শ্রী বালক ব্রহ্মচারী মহাশয়ের লেখা ‘বেদ ভিত্তিক “আদি বেদে আমার তােমার’ বলে কিছুই ছিল না। সবকিছুই আমাদের।” অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে, সেযুগে সকল বস্তুর উপর ছিল সকলের সম অধিকার? কিন্তু ক্রমে ক্রমে কিছু ধান্দাবাজ মানুষ কিভাবে সু-কৌশলে সমাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করে সাম্যের বদলে শশাষণের রাস্তা কায়েম করেছিল, তার খােলাখুলি বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, “প্রথমেই তারা স্থানে স্থানে ঘাঁটি করে তাকে ‘আশ্রম মন্দির ইত্যাদি নাম দিল। সে বিকৃত অর্থ করেই গ্রন্থের পর গ্রন্থ রচনা করা হল। এভাবেই শুরু হল বিকৃত শাস্ত্রের প্রচার ও প্রসার। বেদের সাম্যনীতির উপর দাঁড়িয়ে বেদের বিশ্লেষণ করতে করতে এক এক জন এক এক দিকে ‘অভিজ্ঞ’ হয়ে উঠেছিল। সেখানে এ দুশমনরা, তাদের বেদের উপর বিশ্বাসের সুযােগ নিয়ে সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দিল। জনসাধারণ বুঝতেই পারল না, কত বড় ক্ষতি তাদের হয়ে গেল। বেদের বিভিন্ন শ্লোক, বিভিন্ন মন্ত্র, বিভিন্ন মূর্তি, শিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্যের রূপকে যদি আমরা তন্ন তন্ন করে বিশ্লেষণ করে দেখি, তাহলে দেখব, তাদের রচনা ও পরিকল্পনার পেছনে বেদজ্ঞ ঋষিদের দূরদর্শিতা ও তৎকালীন সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনাই সব চাইতে বেশি কাজ করছে। তারা যা কিছু বলেছেন, যা কিছু লিখেছেন, যা কিছু করেছেন-সবকিছুই তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই করেছেন। যেমন ধর, বেদের অনেক শ্লোকই সূর্য, বরুণ, পবন, বসুমতী প্রভৃতির রূপ গুণ বর্ণনা করে। বলা হয়েছে, এরাই জাতির ও জীবনের উন্নতির মূল। সুতরাং নিজের হিত যদি চাও, তাহলে এদের শরণাপন্ন হও। কেন এরা একথা বললেন? তখন দেশ কৃষিপ্রধান ছিল। আলাে, বাতাস, জল, মাটি কৃষির প্রধান উপায়। সুতরাং এ বস্তুগুলাের স্মরণ নাও, ক্ষেতের যত্ন নাও। সেচের উন্নতি কর। আলাে বাতাসকে যথাযথ কাজে লাগাও-তাহলে কল্যাণ হবে, মঙ্গল হবে, দেশ ধনধান্যে ভরে উঠবে, কোন অভাব থাকবে না। বেদে অনুগ্রহের সময় পঞ্চদেবতাকে স্মরণ করে আচমন করার যে বিধি দেয়া হয়েছে, তার পেছনেও এ পঞ্চভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত ব্যোম---যাদের বিভিন্ন রূপের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য, বস্তু ইত্যাদি পাচ্ছি, তাদেরই স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি মন্ত্র ব্যাখ্যা করলে দেখবে-সেখানে ভগবান বলেও কিছু বলা হয়নি, দেবদেবী বলেও কিছু বলা হয়নি। বরং তাতে বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা, ভবিষ্যত সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনার ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।