অসভ্য! অত্যন্ত দুঃখিত। মাফ চাই। মাফ চাইলেই সাতখুন মাফ! এক গাদা বই হাতে বারেক বেরিয়ে এসেছে লাইব্রেরি থেকে। শিউলি কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো। তারপর লাইব্রেরিতে ঢুকেছে। চারদিক একবার দেখেও নিয়েছিলো। না, কেউ তার দিকে তাকিয়ে নেই। শিউলি বসেও স্বস্তি পায়নি। তার ডান পাজরটা ব্যথায় রি-রি করছিলো তখনো। লেগেছে কি কম! অসভ্য ছেলেটা যেভাবে জোরে বেরিয়ে এসেছে, সেওতো কম জোরে যায়নি। ছেলেটাকে অসভ্য ভাবতে সে নিজেও কেমন জানি আহত বোধ করেছিলো। সে তো ভুল করেছিলো। ক্ষমাও চেয়েছিলো। তবে তার উপর রাগটা তার তখনো পড়ছিলো না কেন? সে একটা বই এর নাম লিখে বেয়ারার এর হাতে দিয়েছে। বই হাতে নিয়ে মনোযোগ দিতে চেয়েছে। তার দুপাতা পড়েও যখন শিউলি কিছুতেই কালো অক্ষর ছাড়া কিছুই দেখতে পায়নি, তখন বই বন্ধ করে উঠে এসেছে। ছেলেটার অনিচ্ছাকৃত অপরাধে তাকে অসভ্য বলা ঠিক হয়নি। সে বড় কটুকথা বলে ফেলেছিলো। কিন্তু সে অবস্থায় কার না রাগ হয়। তবু তার মনে হয়েছে-সে বড় অন্যায় করে ফেলেছে। শিউলির অন্যায় বোধটা হয়ত কমে যেতো। কিন্তু সাহিত্য প্রতিযোগিতায় বারেক যখন এক এক করে কয়েকটা পুরস্কার অধিগত করেছে শিউলির অপরাধ বোধটা তখন দ্বিগুণ হয়ে দেখা দিয়েছে। নিজের কাছে সে নিজেই যেন অনেকটা ছোট হয়ে পড়েছে। বাড়িতে অর্থনীতির বই খুলে বসেছে শিউলি। না। ভালো লাগেনি পড়া। রেডিওটা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়েছে একটা অস্বস্তি নিয়ে। বারেকের কাছে মাফ চেয়ে নেয়া দরকার। সেদিন না বুঝে সে গালি দিয়েছে। দূর! একটা সামান্য ব্যাপারে সে এত ভাবছে কেন? গানে মন দিতে চেয়েছে শিউলি। না, গানও ভালো লাগেনি। বালিশটা সজোরে আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করেছে। তার ভাবনা রাজ্যের সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সবখানেই সে বারেকের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছিলো যেন। মুখে সেই কথাটা-অত্যন্ত দুঃখিত, মাফ চাই।