কুর’আন মাজিদের শেষ ১০ সূরার বিশ্লেষণ আলহামদুল্লিল্লাহ্, কুরআন মাজিদের শেষ ১০টি সুরা’র উপর একটি বিশ্লেষণধর্মী শিক্ষার্থী তাফসির নোট [Student’s Tafseer Note] এই প্রকাশনায় লিপিবদ্ধ করা হল। এই অবশ্যই একটি নতুন ধারা। এতোদিন আমরা বিদ্বানদের প্রণিত বই পড়ে আসছি। এটি হল শিক্ষার্থী নোট। অর্থাৎ কুরআন মাজিদ বোঝার প্রচেষ্টায় রত শিক্ষার্থী যা বুঝতে পেরেছে তা এখানে লিপিবদ্ধ করেছে। এতে অনেক ভুল থাকা স্বাভাবিক। যা ভবিষতে সংশোধন করতে পারবেন যে কোনো শিক্ষার্থী এবং উস্তাদ। এই প্রকাশনাটি সবার জন্য উম্মুক্ত। কোনো কপি রাইট নেই। যে কেউ এটির ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে,উপস্থাপনা আরো সুন্দর করে যে কোনো মাধ্যমে বিষয়টি’র উপর প্রকাশনা করতে পারবেন, সংকলকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
এই শিক্ষার্থী তাফসির নোটটির উপর একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনা আল বালাগুল মবিন-এর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা রয়েছে। https://www.youtube.com/channel/UCHsWfOl91OIuPUpjiEB8zpQ। উক্ত চ্যানেলে প্লে-লিস্ট এ সুরাভিত্তিক উপস্থাপনাগুলো গ্রুপ করা রয়েছে। সেখানে একই উপস্থাপনা তিনটি সেশনে করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ ফজর, শুক্রবার সকাল ৯টায় এবং শনিবার বাদ ফজর বনানী মসজিদে। ফাইলগুলোর শেষ তারিখ এবং ফজর, মর্নিং এবং বনানী ট্যাগ দিয়ে বিষয়টি নির্দেশ করা রয়েছে। একই বিষয়ে ৩ বার আলোচনা করা হলেও উপস্থাপনার ভিন্নতা রয়েছে এবং কোনো আলোচনায় কোনো একটি পয়েন্ট মিস হলে অন্যটিতে সেটা কভার করা হয়েছে। ফলে সবগুলো উপস্থাপনা দেখা গেলে বিষয়টি’র উপর ৩ বার রিভিউ হবে যা শেখার জন্য বেশ কার্যকর।
এই প্রকাশনা এবং অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার মুল উদ্দ্যেশ্য হলো: একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী এখান থেকে বিষয়টি নিজের মতো করে নিজে নিজ শিখে নিতে পারবেন [تَعَلَّمَالْقُرْآنَ ]। অতঃপর আশা করা হচ্ছে যে, তিনি সেটা আরো সুন্দরভাবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করবেন [وَعَلَّمَهُ ]। ফলে তাঁর শেখাটি কার্যকর হবে এবং একইভাবে নতুন শিক্ষার্থী তৈরি হবেন। ফলে রাসুল (সাঃ)-এর সেই হাদিসটি’র বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে : خَيْرُكُمْمَنْتَعَلَّمَالْقُرْآنَوَعَلَّمَهُ“তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে তা শেখায়”।
কুরআন মাজিদের শেষ ১০ সুরা’র উপর এই অধ্যয়ন প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে সুরাগুলো’র মর্মার্থ বোঝা এবং প্রতিদিনের সলাহ্য় এই সুরাগুলোর পঠনের সময় মনোনিবেশ সহজ করা। আল্লাহ্ কুরআন নিয়ে আমাদের চিন্তা-গবেষণা করতে বলেছেন। প্রতিটি সলাহয় কুরআন মাজিদের যে অংশগুলো আমরা পাঠ করি বা শ্রবণ করি তা গভীরভাবে অন্তকরণের মাধ্যমে কুরআন এর সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সেই আলোকে আমাদের এই প্রচেষ্টা। সুরাগুলোর শাব্দিক অর্থের পাশাপাশি তফসির বিশ্লেষণ বোঝাটা জরুরী। তার উপর ভিত্তি করে আমাদের নিজস্ব চিন্তা-গবেষণাকে এগিয়ে নিতে হবে। বিভিন্ন তাফসিরকারক তাদের চিন্তা-গবেষণাগুলো লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেটা থেকে আমাদের প্রত্যেকের বুঝটা এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান সময় অডিও-ভিডিও মিডিয়া রেকর্ডিং এর যুগে এই তাফসিরগুলোর উপর আলোচনা শোনার সুযোগ তৈরী হয়েছে যা পঠনের চেয়ে আরো বেশী কার্যকর। সেই আলোকে এই তাফসির শিক্ষার্থী নোটটি তৈরী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ১০টি সুরা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, (ক) সুরাগুলোর নিজস্ব সতন্ত্র বক্তব্য থাকার পাশাপাশি এগুলো ক্রম অনুসারেও একটি অন্যটি’র সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সংযুক্ত হয়ে আরো বড় পরিসরে অভিবক্তি প্রকাশ করছে। (খ) সুরা গুলো’র আয়াতের বিন্যাসে বিভিন্ন ধরণের কাঠামো পরিলক্ষিত হয়েছে যা এর বিশ্লেষণকে আরো ব্যাপক করেছে। (গ) এই ১০টি সুরার বাইরেও কুরআন মাজিদের অন্যান্য সুরার বিভিন্ন আয়াতের সাথে এই সুরাগুলোর বিশেষ সংযোগ এবং প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। (ঘ) পর পর দুটি সুরার মধ্যে সংযোগ খুব বেশী শক্তিশালী হওয়া, অনেক সাহাবী সেই দুটি সুরার মাঝে বিসমিল্লাহ্ না পড়ে এক সাথে মিলিয়ে পড়েছেন। ঙ) সুরা আল কাফিরুন এবং সুরা আল ইখলাস পাশাপাশি সুরা না হওয়া শর্তেও এই দুটি সুরা বিশেষ কিছু নাওফেল/সুন্নত সলাহয় পাঠ করা হয়ে থাকে। বিশ্লেষণে দেখে গেছে তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। চ) প্রতিদিন সলাহর পর সুরা ইখলাস, ফালাক এবং নাস পাঠ করার সুন্নত রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্’র কাছে সবধরণের অমঙ্গল/অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই। এই সুরাগুলোর বক্তব্যে তা পরিস্ফুটিত, যা বোঝা বিশেষ প্রয়োজন।
এই প্রকাশনাটির তথ্যসূত্র হিসেবে কোনো বইয়ের তালিকা নেই। কারণ এগুলো মূলত তৈরী করা হয়েছে বাইয়্যানাহ্ ইনস্টিটিউট এর তাফসির লেকচার থেকে। লেকচারগুলো বিভিন্ন তাফসির এবং হাদিস গ্রন্থ গবেষণা করে তৈরী করা হয়েছে। ফলে কোনো বিষয়ে অস্পস্ট মনে হলে, বাইয়্যানাহ্ –এর ওয়েবসাইট থেকে তা দেখে নেয়া যেতে পারে। এই প্রকাশনা এবং উপস্থাপনাগুলো তৈরিতে আমাদের কুরআন-এর সাপ্তাহিক ৩টি দরসে উপস্থিত সাহাবীরা প্রত্যেকে বিশেষভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাঁদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন, এই কাজটি উত্তম কাজগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং এটিকে আমাদের জান্নাতে যাবার উপলক্ষ করে দিন !
গত তিন বছরে আমাদের কুরআন এর দরসটি বেশ কয়েকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আলহামদুল্লিল্লাহ্, আল্লাহ্’র অনুমতিক্রমে সব বাধা অতিক্রম করে অতীতের চেয়ে আরো ভালোভাবে দরসগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি এই সিরিজটি যেদিন শেষ হয় বনানী মসজিদে, সেদিন অনাকংখিতভাবে বনানী মসজিদ কমিটির কিছু সদস্য আমাদের এই দরসটি বন্ধ করে দেয়। আল্ হামদুল্লিল্লাহ্, আরো ভালো পরিসরে এর পরের সপ্তাহগুলোতে আরো দুটি জায়গায় (গুলশান সোসাইটি মসজিদ এবং মিরপুর ডিওএইচএস-এ) নতুন কুরআন এর দরস শুরু হয়।
দরসের প্রতিদিনের নোটগুলোর বানান এবং বাক্যগঠনগুলো নিয়মিত সংশোধন করেছেন মোঃ নজরুল ইসলাম ভাই, প্রকাশনাটি ব্যবস্থাপনা করেছেন মোঃ ফেরদৌস আলম ভাই, আল্লাহ্ তাঁদের উত্তম প্রতিদান দিন। ৩টি নিয়মিত দরস ব্যবস্থাপনায় অনেকই নিয়মিতভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, আর্থিকভাবে অনেকেই সহযোগিতা করেছে, মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে এবং নিয়মিত অংশগ্রহণ করে অনেকেই একনিষ্ঠভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহ্ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন !
এই প্রকাশনাটির একটি চলমান সফট কপি পিডিএফ ফাইল হিসেবে আপডেট করা থাকবে। পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইল যেকোনো ধরনের ভুল-ভ্রান্তি আমাদের কাছে পাঠান। ইন্-শায়া-আল্লাহ্ আমরা সাথে সাথেই তা সফটকপিতে আপডেট করব এবং পরবর্তী প্রকাশনা’য় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
পরিশেষে বিশেষভাবে দোয়া করতে চাই বাইয়্যানাহ্ ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্র-এর সকল কর্মচারী কর্মকতা ও বিশেষ করে উস্তাদ নুমান আলী খান-এর জন্য এবং আন্ডারস্ট্যান্ড কুরআন একাডেমি, ভারত এর সকল কর্মচারী কর্মকতা ও বিশেষ করে ড. আব্দুর রাহীম আবুদল আজিজ-এর জন্য। তাঁদের কুরআন বোঝার বিভিন্ন গবেষণা এবং কোর্স অধ্যয়ন থেকে আমাদের এই কাজটি সম্পাদিত হয়েছে আল্লাহ্’র ইচ্ছায়। আল্লাহ্ তাঁদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন ! সকল হামদ (প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা) আল্লাহ্’র জন্য যিনি হলেন আমাদের রাব্ব (প্রভু, প্রতিপালক, অনুগ্রহদাতা, বিশ্বচরাচরের ধারক, প্রতাপশীল)। (সংকলক এবং সম্পাদক)
প্রকৌশলী নাঈম আহমেদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর পুরপ্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন । অতঃপর কিছুদিন বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরী করে নিজ ব্যবসায় নিয়োজিত হন । তিনি আর্থিক বিশ্লেষণ এবং সফটওয়্যার সেক্টরে পরিচালিত বিসনেস ইনফরমেশন অটোমেশন সার্ভিস লাইন প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী । ২০১১ সাল থেকে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে কুরআন শেখার প্রচেষ্ঠায় নিয়োজিত । ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বাইয়্যিনাহ্ ইনস্টিটিউটের এক মাস ব্যাপী কুরআন ইনটেনসিভ কোর্সে (যা উস্তাদ নুমান আলী খাঁন সরাসরি পরিচালনা করেছিলেন) অংশগ্রহণ করেছিলেন । পরবর্তী সময়ে অনলাইনে কুরআনিয় আরবি ব্যাকরণ শিক্ষার “একসেসে” প্রোগাম এর কোর্সগুলো সম্পন্ন করেছেন । ইতিপূর্বে তিনি ভারতের আন্ডারস্ট্যান্ড কুরআন একাডেমীর অনলাইন কোর্সের মূল দুটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন । বিগত ৬ বছর যাবত তিনি “আল বালুগুল মুবিন” নামক একটি কুরআন শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন । “আল বালুগুল মুবিন” নিয়মিতভাবে বেশকিছু কুরআনের তাফসীর এবং আরবি ব্যাকরণের দরস পরিচালনা করে আসছে । এসব আলোচনার রেকডিং ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত আপলোড হচ্ছে । আর আলোচনাগুলোর টপিক ভিত্তিক ইনডেক্স ওয়েবসাইটে দেয়া আছে: http://albalaghulmubin.org । উক্ত দরসগুলোতে সপ্তাহে ১৫০+ জন অংশগ্রহণ করে থাকেন । ইউটিউব চ্যানেল : https://www.youtube.com/channel/UCHsWfOl91OIuPUpjiEB8zpQ তার রচিত কুরআনের শেষ ১০ সুরার উপর একটি বিশ্লেষণ মূলক বই ইতিমধ্যে বাজারে বেরিয়েছে । সম্প্রতি দুই খন্ডের কুরআনিয় আরবি ব্যাকরণের বই সিরিজের প্রথম খন্ড ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে ।