কামাল আতাউর রহমান তার কবিতাগুলো স্বনিষ্ঠ আবেগে তৈরি করেছেন। তার প্রচেষ্টা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে অকৃত্রিমÑএ কথা না বলে উপায় নেই। লক্ষ করার মতো তার হাতের সচ্ছলতা, চিন্তার পরিচ্ছন্নতা, সমকালীন বিশ্ববোধ ও দেশকাল জটিলতা বোধ কেমন ব্যক্তিদ্ব›েদ্ব সংক্রামিত করে নৈর্ব্যক্তিক করতে পেরেছেন। কবিতাগুলো মনের তীব্রতা দিয়ে লিখেছেন। রমণী ও প্রেমকে কবি দেখেছেন একক নায়িকার সংলাপমুখর অভিনয়ে। মানব প্রতিমাকে প্রত্যক্ষ করার রীতি রবীন্দ্রনাথে খুব স্পষ্ট; জীবনানন্দে সর্বাধিক শনাক্ত করা হয়েছে। বুদ্ধদেব বসুও কম নন। আলোচ্য কবি চেষ্টা করেছেন স্বতন্ত্র প্রয়াসে আরও ব্যক্তিকরূপে চিহ্নিত করতে। ‘তবু আজ স্মৃতি আছে’ কবিতাটিতে নির্জলা স্মৃতির কথাই বলা হয়েছে। ‘স্বপ্ন’ কবির স্মৃতিচারণার স্বপ্ন। সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও শৈশব-কৈশোর বেঁচে থাকে স্মৃতিতে। এইটুকুই মর্মকথা কবিতাটির। চিত্র ব্যবহার শব্দ ব্যবহার ও ব্যঞ্জনার সামঞ্জস্যতা উপেক্ষা করা যায় না। তবু একদিন তুমি ছিলে, সত্য ছিলে, সেটুকু আমার অতীতে আছে, মানুষেরা অতীতের সঞ্চয় রেখে দেয় সযতনে বুকের মাঝে সে তো সময়ের সাথে পাঞ্জা ধরে ধরে বিজয়ী হওয়া। উদ্ধৃত অংশটুকু সচ্ছলতার ‘চমৎকার’ দৃষ্টান্ত। আবার চিত্র ব্যবহারের নৈপুণ্যও প্রশংসনীয়Ñ নদীর দলের শব্দ তোমার বাড়ির আঙ্গিনা ধরে দাঁড়িয়েছিলো একদিনÑকোন একদিন, কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরেছিলো তোমার গৃহের ছাঁদে খেয়াঘাট ছিল সেদিন তোমার ঘরের পাশেই। ‘ঘরবাঁধার রহস্য’ ‘তানিয়ার মতো মেয়েদের কথা’ নায়ক-নায়িকানির্ভর কবিতা দুটিতে কবির ব্যক্তিচেতনা ঔজ্জ্বল্যময়। সংহত আবেগধর্মী চোখ কবিতার আঙ্গিক ও স্বকীয়তা নিঃসন্দেহে অকুষ্ঠ প্রশংসনীয়।