"একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কিংবদন্তিসম খ্যাতি অর্জনকারী বীরযােদ্ধা শাফায়াত জামিল, লড়াইয়ের ময়দানে অকুতােভয় যে মানুষটি বাস্তবজীবনে পরম মিতবাক ও নিভৃতচারী। তদুপরি স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে। ষড়যন্ত্রকারীদের পুনরুত্থান, বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং নভেম্বরের প্রতিবিপ্লবী চক্রান্তে চার জাতীয় নেতা ও অগ্রণী মুক্তিযােদ্ধাদের হত্যায় ব্যথিতচিত্তে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন আরাে বেশি। অথচ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে সুচনাকালে তার নেতৃত্বেই ঘটেছিল বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রায় পাঁচশ’ সৈনিকের বিদ্রোহ, প্রাথমিক প্রতিরােধের সেটা ছিল গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। এরপর রংপুর ও সিলেটের বিভিন্ন রণাঙ্গনে। শত্রুর ত্রাস হয়ে বহু অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শাফায়াত জামিল, জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য করে। স্বদেশের মুক্তির জন্য যে মরণখেলায় মেতেছিলেন তার। শেষ পর্যায়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগী মনােভাব দ্বারা যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন অগণিত সহযােদ্ধাদের এবং হয়ে উঠেছেন একাত্তরের বাঙালির বীরগাথার অন্যতম রূপকার। দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর তিনি বাময় হয়ে বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, তরুণ সাংবাদিক সুমন কায়সারের সহযােগে তিনি মেলে ধরেছেন রণাঙ্গনের অগ্নিঝরা স্মৃতি। সেই সঙ্গে যােগ করেছেন পচাত্তরের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যালীলার বিবরণ, যে ঘটনাধারা অত্যন্ত। কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে শাফায়াত জামিলের গ্রন্থ হয়ে উঠেছে আমাদের। ইতিহাসের অনন্য ও অপরিহার্য সংযােজন।
সূচীপত্র প্রথম পর্ব মুক্তির জন্য যুদ্ধ ১১ *বিদ্রোহ *শুরু হলো প্রতিরোধ যুদ্ধ *তৃতীয় বেঙ্গলের দায়িত্ব গ্রহণ *স্বদেশের মাটিতে যুদ্ধ *সিলেট অঞ্চলে অভিযান ও চূড়ান্ত যুদ্ধ
দ্বিতীয় পর্ব রক্তাক্ত মদ্য-আগস্ট ৯৯
তৃতীয় পর্ব ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর ১২৩
Title
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর
Cornel Safayet Jamil (Retired) (জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৪০ - মৃত্যু: ১১ আগস্ট, ২০১২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। তাঁর বাবার নাম এ এইচ এম করিমউল্লাহ এবং মায়ের নাম লায়লা জোহরা বেগম। তাঁর পিতা এএইচ করিমুল্লাহ ছিল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (জুডিশিয়াল) অফিসার ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম রাশিদা শাফায়াত। তাঁদের তিন ছেলে। শাফায়াত জামিল ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি ঐ একাডেমীতে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের (পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট) সহপাঠি ছিলেন। শাফায়াত জামিল ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে পাকিস্তানি সেনারা এই রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানিকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠায়। একটি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সংবাদ পেয়ে তিনি তাঁর ও অপর কোম্পানির সবাইকে নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধপর্বে আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া-গঙ্গাসাগর এলাকায় যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মতিনগরে যান। তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দেওয়ানগঞ্জ, সিলেটের ছাতকসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং বীর বিক্রম পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন । ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে তিনি এবং খালেদ মোশাররফ খন্দকার মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান । ৬ নভেম্বর মোস্তাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন। ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয় এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হন । জামিল ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হন ।