"প্রেম ও বিরহের কবিতা (১৬১টি কবিতা)" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা বাংলা কবিতার পাঠকদের কাছে মহাদেব সাহার একটি বিশেষ পরিচয় তিনি প্রেমিক কবি; তাঁর প্রেমের কবিতা আবেগময়, হৃদয়স্পর্শী ও স্বতােৎসারিত, যেখানে বাংলা কবিতার প্রেমের শাশ্বত রূপটিই বিধৃত হয়ে আছে। এই যে চারপাশের দৃশ্যমান জগতের মধ্যে নিত্যদিনের জীবন, যেখানে নরনারী চিরন্তন আবেগে ও ভালােবাসায় ঘর বেঁধেছে, সেই জীবনের মধ্য থেকেই মহাদেব সাহা তার প্রেমের কবিতার উপাদান সংগ্রহ করেন; তাই তাতে মিশে আছে মাটির গন্ধ, জীবনের নির্যাস। এক আশ্চর্য সাবলীলতায় তিনি মানব-মানবীর জীবনরহস্যের সবচেয়ে গাঢ় ও সংবেদনশীল রূপটিকেই উদ্ঘাটিত করেছেন, প্রেম ও সৌন্দর্য যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর প্রেমের কবিতা তাই অনিবার্যভাবেই সৌন্দর্যেরও কবিতা। প্রাত্যহিক জীবনের ছোঁয়ায় যে প্রেম মলিন হয়ে যায়, পুরনাে হয়ে যায় যে ভালােবাসা, তাকে চিরনতুন, রূপময়, সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের এই দুঃখময় জীবনকেই সহনীয় করে তােলেন তিনি, মানুষ এক মুহুর্তের জন্য হলেও ফিরে আসে স্বপ্নজগতে। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য। অবিরল ধারায় লিখে যাওয়া এইসব কবিতা যেন জলপ্রপাতের অনিঃশেষ ধারা। তাঁর কবিতা পড়তে পড়তে আমরা সেই চিরকালীন সৌন্দর্যলােকেই ফিরে যাই, এই সাধারণ জীবনও যেখানে অসাধারণ হয়ে ওঠে। আমাদের সকলের জীবনেই এমন কোনও কোনও মুহূর্ত আসে যখন মনে হয় পৃথিবী মধুময়, জীবন সুন্দর; সেই অব্যক্ত অনির্বচনীয় সুখানুভূতির এক অপরূপ স্পর্শ পাওয়া যায় তাঁর কবিতায়। তার প্রেমের কবিতা যেমন সংহত, বেদনার্ত ও বিষন্ন তেমনি নম্র,। বিনীত ও অন্তরালবর্তী; তার প্রেমের কবিতার প্রধান আকর্ষণই হলাে অন্তলীন বেদনাবােধ। প্রেম ও বিরহের কবিতা এই অভিমানী প্রেমিক কবির এক অনুপম কাব্যসঙ্কলন।
Mahadeb Shaha ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী সাহা। সাহিত্যনুরাগী পিতা গদাধর সাহার বাড়িতে আসত মাসিক বসুমতী সংবাদ, দৈনিক লোকসেবক, বাই উইকলি অমৃতবাজার পত্রিকা। কলকাতা থেকে আনা হতো পিএম. বাগচী ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের একজন অন্যতম প্রধান কবি। তিনি তাঁর সাহিত্যিক অবদান দিয়ে সব ধরনের পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তিনিে রোম্যান্টিক গীতিকবিতার জন্য জনপ্রিয়। তার কবিতা অপরিশ্রুত আবেগের ঘনীভূত প্রকাশে তীব্র। তিনি জীবিকাসূত্রে একজন সাংবাদিক ছিলেন, এবং দীর্ঘকাল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ থেকে তিনি কানাডা প্রবাসী।