প্রসঙ্গ : এক জীবনের জন্মজখম কিংবা হেলাল হাফিজ এর কবিতাসমগ্র হেলাল হাফিজ। অল্প লিখেও গল্প হয়েছেন। এমন পাঠক সম্ভবত খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে যিনি হেলাল হাফিজের কবিতার সঙ্গে পরিচিত নন কারণ হেলাল হাফিজ জনপ্রিয় এবং ধ্রুপদী। সমগ্র বাংলা কবিতায় তীব্রতম হাহাকারটি উচ্চারণ করেছেন যে কবি তার নাম হেলাল হাফিজ। উদাহরণ : না দিয়ে যৌবন শুরু, কার যেন বিনা দোষে শুরুটা হলো না। বাংলাদেশের কবিতায় হেলাল হাফিজের উত্থান ষাটের দশকে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' এর মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতায় ঘটেছিলো হেলাল হাফিজের দুর্ধর্ষ অভিযান। তারপর থেকে তিনি যা লিখেছেন, তা-ই হয়ে উঠেছে শিল্পোত্তীর্ণ: নিউট্রন বোমা বোঝ মানুষ বোঝ না! একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধোত্তর স্বপ্নভঙ্গ প্রেম দ্রোহ নিয়ে লিখেছেন একের পর এক অসাধারণ কবিতা যা বাংলা কবিতার ইতিহাসে চিরস্থায়ী সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত: ১. তবে কি মানুষ আজ আমার মতন নদীর উল্টো জলে দিয়েছে সাঁতার, তবে কি তাদের সব লোহিত কণিকা এঁকেছে আমার মতো স্কেচ, তবে কি মানুষ চোখে মেখেছে স্বপন পতন দিয়েই আজ ফেরাবে পতন।
২. যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন, যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে ভেঙ্গে সেই কালো কারাগার আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
(জন্মঃ ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। ওই গ্রন্থটির ১২টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’:- এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। দেরীতে হলেও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।