‘ছেলেদের মহাভারত’ বইটির কিছু অংশঃ আদিকাণ্ড অনেকদিন আগে আমাদের এই ভারতবর্ষে দশরথ নামে এক রাজা ছিলেন। সরযূ নদীর ধারে, অযোধ্যা নগরে তিনি রাজ্য করিতেন। সেকালের অযোধ্যা নগর আটচল্লিশ ক্রোশ লম্বা, আর বার ক্রোশ চওড়া ছিল। তাহার চারিদিকে প্রকাণ্ড দেওয়ালের উপরে লোহার কাঁটা দেওয়া ভয়ঙ্কর অস্ত্রসকল সাজানো থাকিত। সে অস্ত্রের নাম শতঘ্নী, কেন না তাহা ছুঁড়িয়া মারিলে একেবারে এক শত লোক মারা পড়ে। তখনকার অযোধ্যা দেখিতে খুব সুন্দরও ছিল। ছায়ায় ঢাকা পরিষ্কৃত পথ, ফুলে ভরা সুন্দর বাগান, আর দামী পাথরের সাততলা আটতলা জমকালো বাড়িতে নগরটি ঝলমল করিত। এই সুন্দর অযোধ্যা নগরে শাদা পাথরের বিশাল রাজপুরীতে শাদা ছাতার নীচে বসিয়া মহারাজ দশরথ তাঁহার রাজ্যের কাজ দেখিতেন। বৃষ্টি, বিজয়, অকোপ, জয়ন্ত, সুমন্ত্র, সুরাষ্ট্র, ধর্মপাল আর রাষ্ট্রবর্ধন নামে তাঁহার আটজন মন্ত্রী এমন বিদ্বান বুদ্ধিমান আর ধার্মিক ছিলেন যে, তাঁহারা দেশে একটিও অন্যায় কাজে হইতে দিতেন না। সে দেশে চোর ডাকাত ছিল না। ভাল ছাড়া মন্দ কাজ কেহ করিত না। ভাল খাইয়া, ভাল পরিয়া, ভাল বাড়িতে থাকিয়া সকলেরই সুখে দিন যাইত। রাজা দশরথ তাহাদিগকে এত স্নেহ করিতেন যে আর কোন রাজা তেমন করিতে পারিতেন না। দশরথকেও তাহারা তেমনি করিয়া ভালবাসিত হায়! এমন রাজা দশরথ, তাঁহার একটিও ছেলে ছিল না। ছেলে নাই বলিয়া তিনি ভারি দুঃখ করিতেন। একদিন তিনি মন্ত্রীদিগকে বলিলেন, “দেখ, আমি যজ্ঞ করিব। হয়ত তাহাতে খুশি হইয়া দেবতারা আমাকে পুত্র দিবেন। এ কথা শুনিয়া সকলে বলিল, “মহারাজ আপনি ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিকে নিয়া আসুন। তিনি যজ্ঞ করিলে নিশ্চয়ই আপনার পুত্র হইবে।' এই মুনির হরিণের মত শিং ছিল, তাই লোকে তাঁহাকে ঋষ্যশৃঙ্গ বলিত। এমন ভাল মুনি কমই দেখা গিয়াছে। মন্ত্রীদিগের কথা শুনিয়া দশরথ বলিলেন, ‘বড় ভাল কথা। ঋষ্যশৃঙ্গ যে আমার জামাই হন, কারণ তিনি আমার বন্ধু লোমপাদ রাজার মেয়ে শান্তাকে বিবাহ করিয়াছেন। আমি নিজেই তাঁহাকে আনিতে যাইব লোমপাদ রাজার বাড়ি অঙ্গদেশে। দশরথ সেই অঙ্গদেশে গিয়া ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিকে লইয়া আসিলেন। তারপর যজ্ঞ আরম্ভ হইল। আগে হইল অশ্বমেধ যজ্ঞ। ঘোড়ার মাংস দিয়া এই যজ্ঞ করিতে হয়। প্রথমে একটা ঘোড়া ছাড়িয়া দেওয়া হইল। ঘোড়ার সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র লইয়া অনেক……….
উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭শে বৈশাখ (১৮৬৩ সালের ১০ই মে) ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে, যা অধুনা বাংলাদেশে অবস্থিত। তাঁর পিতা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আটটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশী, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। ১৯১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর পরলোক গমন করেন।