কিছু মানুষের জীবনগল্প আমাদের মতো আটপৌড়ে হয় না। প্রমত্তা নদীর মতো তাদের জীবন সবসময় বয়ে চলে ভাঙা-গড়ার তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে। এমনকি তাদের ভালোবাসার গল্পগুলোও হয় ঘাত-অভিঘাতের প্রচণ্ড সংগ্রামমুখর। ইশকুল অব লাভের ‘হাজি সাহেব’ ও ‘দিদিমা’এর জীবনগল্পও অনেকটা সে ধরনের। তখন ইংরেজ সরকারের ক্রান্তিকাল চলছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙার অণলে পুড়ে যাচ্ছে দেশ। বিশ্বাসের দালানগুলোও তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। ইতিহাসের এমন এক ক্লান্তিকর সময়েই মিলিত হয় দু’জন মানুষ। সময়ের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে দুটি বিপরীত মেরুর মানুষ মুখোমুখি হয় ভালোবাসার চৌরাস্তায়। একদিকে হুড়মুড় করে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়ছে। অন্যদিকে দু’টি মানুষের জীবনের বিনিসূতো যুক্ত হচ্ছে ভালোবাসার রেশমি বুননে। দাঙা, অবিশ্বাস, আগুন, সংঘাত আর আবেগের সাংঘর্ষিক আবহের ভেতর দিয়ে হাজি সাহেব এগিয়ে যান, ভালোবাসার জান্নাতে। দিদিমার সঙ্গে তার সংগ্রামমুখর ভালোবাসার এ উপাখ্যানেই থেমে যায়নি ‘ইশকুল অব লাভ’ এর প্লট। গল্পের ছুঁতোয় উঠে এসেছে বৃটিশশাসিত কলকতার বাম রাজনীতি, কোনঠাসা ইসলামি ঐতিহ্য, খ্রিস্টান মিশনারির প্রকোপ আর লেন্দুপ দর্জির অভাগা সিকিমের ভাগ্যহত হওয়ার বেদনানীল গল্প। ইতিহাসের এই শিক্ষাগুলো আমাদের বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্যে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। হয়তো আমাদের সচেতনতা থামিয়ে দেবে নতুন আরেকটি সিকিম তৈরির কালো তোড়জোড়। গল্পের শেষ দৃশ্যে এসে আপনিও অনুভব করবেন, দিদিমার মতো আমরা প্রত্যেকেই বুঝি আমাদের ভুবনে একা। ভীষণ একা। হায়! চোখের কোণে দু’ ফোঁটা অশ্রুই বুঝি আমাদের সবার জীবনের অন্তিম দৃশ্য। গল্পকার আতীক উল্লাহ ভাইয়ের সার্থকতা এখানেই। দুটি প্রেমিক অন্তরের জীবনগল্পের ভেতর দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তোলেন ইতিহাসের কিছু নাবলা কষ্টের কথা। কখনো ইতিহাসের পেছনে হারিয়ে যায় জীবনগল্প। একটু বাদেই ইতিহাসের সেই অমসৃণ মেঠো পথ ধরেই আবার উঠে আসে দু’টি প্রেমিক হৃদয়ের ঢেকিছাটা আবেগের প্রমত্তা ঢেউ। -আবদুল্লাহ আল ফারুক ০৯-০৫-২০১৯