শেষ পর্যন্ত ফ্রয়েডের The Interpretation of Dreams-এর দ্বিতীয় পর্বর বঙ্গানুবাদ ‘স্বপ্ন বিশ্লেষণ’ নামে বেরুলাে। ভয় ছিলাে শারীরিক পীড়ার কারণে তা হয়তাে এই বছর সম্ভব হবে না। কিন্তু হলাে। এরপর সামান্য অংশই বাকি থাকলাে। যাকে একটি ক্ষীণকায় তৃতীয় পর্বে বের করা সম্ভব হবে। অতএব পাঠিকা পাঠকদের কাছে আগে থাকতেই ক্ষমা চেয়ে রাখছি, যাতে তাঁরা এই বইয়ের ভুলত্রুটি মার্জনা। করেন। সাধ্যমতাে চেষ্টা করেছি যাতে বঙ্গানুবাদে মূল গ্রন্থের যুক্তি-কাঠামাে বজায় থাকে। কয়েকটি জায়গায় মূল ফরাসি ভাষায় লেখা কিছু উদ্ধৃতি বাদ দিয়েছি এইজন্য যে, প্রথমত আমার ফরাসি জানা নেই। দ্বিতীয়ত ঐ উদ্ধৃতিটুকু বাদ দিয়েও ফ্রয়েডের বক্তব্য যথাযথভাবে যুক্তিসিদ্ধ থাকে। এই খণ্ডের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফ্রয়েডের আত্মবিশ্লেষণ, যা তিনি তার স্বপ্নবিশ্লেষণের সাহায্যে করেছেন। সেই প্রসঙ্গে তাঁর over-determinism বা অতিনিয়ন্ত্রণবাদের তত্ত্ব আলােচিত হয়েছে। বিদেশে এবং এদেশেও অনেকে এখন ফ্রয়েডীয় অতিনিয়ন্ত্রণবাদের তত্ত্বকে কাজে লাগাতে চাইছেন সমাজ-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। কিন্তু সবিনয়ে বলতে হয় যে সমাজদৃশ্য কোনাে স্বপ্ন-দৃশ্য নয়। এছাড়াও কোনাে সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে আদৌ স্বপ্নরূপে দেখতে চাইবেন কিনা সে বিষয়ে ঘােরতর সন্দেহ থেকে যায়। ফ্রয়েড কোনাে একটি স্বপ্ন-চিত্রকল্পের বারবার অতিরিক্ত সময় জুড়ে হাজির হওয়াকেই বলেছেন অতিনিয়ন্ত্রণ (determined overtime)। এর সঙ্গে একটি কাজের একাধিক কারণ কিংবা একাধিক কারণের মূলে একটি কাজের কোনাে সম্পর্ক নেই।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৮৫৬ সালের ৬ মে ফ্রেইবার্গের মােরাভিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন শেষে ১৮৮১ সালে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর থেকেই ফ্রয়েড মস্তিষ্কের শরীর সংস্থান, স্নায়ু রােগসহ মানসিক ব্যাধি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবং পরিণতিতে মনােবিশ্লেষণ নামে এক নতুন জ্ঞানকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটান, যার প্রভাব অদ্যাবধি মানববিদ্যার সকল শাখায় অবিসংবাদিত। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।