ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা এখন বাংলাদেশ নামের একটা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রে বাস করছো, তোমার প্রিয় মাতৃভূমি। কিন্তু ১৯৭১ এর ২৬ মার্চের আগে এমন ছিল না। আমরা ছিলাম পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের একটি অংশ, নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। অপর অংশের নাম ছিল পশ্চিম পাকিস্তান, এখন যে রাষ্ট্রটির নাম পাকিস্তান। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালিদের তখনকার একমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা অতীতের মতো কখনই চায়নি বাঙালিরা ক্ষমতায় আসুক। তারা পরিকল্পিতভাবে জটিলতা সৃষ্টি শুরু করে। এক পর্যায়ে অচল অবস্থা তৈরি হয়। তারা বাঙালিদের স্থায়ীভাবে তাদের অধীনস্থ রাখতে চায়। সমস্যার সমাধানে আলোচনা যখন চলমান তখন পাকিস্তানিরা গোপনে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে তারা ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এবং নিষ্ঠুরতম ব্যবস্থা নেয়। নিরস্ত্র ও অপ্রস্তুত বাঙালি জাতির উপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। তারা নির্বিচারে গণহত্যা ঘটাতে থাকে। বাঙালিরাও দৃপ্ত হস্তে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ব্যতিক্রম থাকে এদেশিয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্থানীয় কিছু সহযোগী আর দালাল যারা শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস নামে কুখ্যাত।। দেশপ্রেমের প্রণোদনায় জেগে ওঠে গোটা জাতি। তোমাদের মতো শিশু-কিশোরাও যোগ দেয় বড়দের সাথে স্বাধীনতার এই যুদ্ধে। তারাও অকাতরে প্রাণ দেয় সম্মুখ সমরে। অবশেষে অনেক প্রাণ, অঢেল রক্ত এবং সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানিরা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সে জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের তোমরা যেমন আজীবন হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসবে তেমনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সহযোগীদের অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। স্বাধীনতা বিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধী এই ঘৃণ্য ব্যক্তিদের বিচার তোমরা নিশ্চিত করবে, যদি কোনো কারণে আমরা করতে না পারি । মুক্তিযুদ্ধের সে রকম অসংখ্য যুদ্ধের একটি কাহিনী এ কমিক বইয়ে। এ কাহিনীর সব ঘটনাই সত্য।
জন্ম : ২৪ জুলাই ১৯৫২। ঝিনাইদহ ক্যাডেট টি কলেজে যখন তিনি এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তখনই ডাক এল মুক্তি সংগ্রামে। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরে এক তরুণ গণযোদ্ধা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের দুই কিংবদন্তি মেজর খালেদ মোশাররফ ও ক্যাপ্টেন হায়দারের সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে পাশে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের হিরন্ময় দিনগুলিতে।একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের পাশাপাশি নিজেকে শাণিত করেছেন স্বদেশপ্রেমের এক প্রগাঢ় চেতনায়। বাহাত্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নির্বাচিত হলেও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠায় বিলম্বের কারণে চুয়াত্তরের ৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং পচাত্তরের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে জিড় ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এ কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৩ সালে বেইজিং ল্যাংগুয়েজ এন্ড কালচার ইউনিভার্সিটি থেকে চীনা ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি । লাভ করেন। তারপর ১২ জুলাই ১৯৯৬ সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন-এ যেমন উচ্চ শাঘার, একমাত্র পুত্র শিশু সাবিতের মৃত্যু তেমনি তার হৃদয়ের গভীরতম ক্ষত । তবুও এ ক্ষত নিয়ে, এই বিক্ষত সময়ে তিনি সবুজআদৃত এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন । ,