"কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ কোয়ান্টাম মেকানিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়। উচ্চতর স্তরে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রয়ােগ রয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি, তত্ত্ব ও প্রয়ােগ বুঝতে না পারলে অন্যান্য বিষয় (যেমন, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স ইত্যাদি) বুঝাও দুর্বোধ্য হবে। অন্যদিকে জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রতি বৎসর শত শত ছাত্রছাত্রী পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীগণ ইংরেজিতে দুর্বল থেকে যাচ্ছে। ফলে ইংরেজি ভাষায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক ভাল বই থাকা সত্ত্বেও তারা শুধু ভাষার কারণে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মত কঠিন বিষয়টি পড়ে বুঝতে পারছে না। তাই পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষা ও প্রয়ােগের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। এটা চিরন্তন যে মাতৃভাষায় কোন বিষয় পড়লে তা সহজে বুঝা এবং আত্মস্থ করা যায়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম নয়। জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালী ইত্যাদি উন্নত দেশের দিকে তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরকে পদার্থবিজ্ঞানে যথাযথ জ্ঞান প্রদান করতে হলে বাংলা ভাষায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মান সম্মত বই থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, বাংলা ভাষায় মুদ্রিত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মান সম্মত বই নাই বললেই চলে। বাংলা ভাষায় শুধু কোয়ান্টাম মেকানিক্স নয় বিজ্ঞানের যেকোন বই লেখার প্রধান সমস্যা পরিভাষা। বিজ্ঞান বিষয়ে একটি একক পরিভাষা প্রচলিত থাকলে খুব ভালাে হত। কিন্তু আজও আমরা এরকম পরিভাষা গড়ে তুলতে পারিনি। যাহােক অন্যান্য ভাষা থেকে অনেক শব্দ বাংলা ভাষায় প্রতিনিয়ত সংযােজিত হচ্ছে এবং এতে ভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে। চেয়ার টেবিলের মত যে সকল ইংরেজি শব্দ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচলিত আছে এবং শুনতে শ্রুতিমধুর এ ধরনের শব্দ এই বইয়ে আমরা সরাসরি ইংরেজি থেকে নিয়েছি। যেমন মেকানিক্স, অপারেটর, স্টেট, ভেক্টর ইত্যাদি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর ফলে বইটি পাঠকদের কাছে বুঝতে সহজ এবং শ্রুতিমধুর হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় বহুদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এটা অনুধাবন করতে পারি যে, কোয়ান্টাম মেকানিক্স শিক্ষায় গাণিতিক বিশ্লেষণ এবং ভৌত তাৎপর্য বুঝার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। সুতরাং আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যাপ্তিতে এই বইয়ে গাণিতিক সুত্রায়ন সহজভাবে উপস্থাপন এবং ভৌত তাৎপর্য ও ধর্মবলী পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এছাড়া প্রত্যেক অধ্যায়ে বেশ কিছু শিক্ষণীয় সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস এ সকল সমাধানের পদ্ধতি থেকে ছাত্রছাত্রীগণ আরাে অনেক সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পাবে ও সমস্যা সমাধানে বেশী আগ্রহী হবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বইটির আকারের দিকে তাকিয়ে কোয়ান্টাম তত্ত্বের সকল বিষয়ের উপর সুবিচার করা সম্ভব হয়নি। যেমন স্থানের অভাবে কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিকস, চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে কোয়ান্টাম সিস্টেমের মিথস্ক্রিয়া, আণবিক সিস্টেমের জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রয়ােগ ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক পৃথক অধ্যায়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তরঙ্গ মেকানিক্স ও মেট্রিক্স মেকানিক্স এই দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স অধ্যায়ন করা যায়। উভয় পদ্ধতি পরস্পর সমতুল্য। কিছু নতুন পাঠকদের জন্য তরঙ্গ মেকানিক্স অপেক্ষাকৃত সহজ। যেহেতু বইটি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্দেশ্যে করে লেখা কাজেই আমি তরঙ্গ মেকানিক্সকে প্রাধান্য দিয়েছি। তবে মেট্রিক্স মেকানিক্সের সাথে পাঠকদের পরিচিত করার জন্য একটি পৃথক অধ্যায় সংযােজন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অধ্যায়ের কিছু স্থানে মেট্রিক্স মেকানিক্স প্রয়ােগ করা হয়েছে।
ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা বি.এস-সি (সম্মান), প্রথম শ্রেণিতে প্রথম; এম.এস-সি (থিসিস) প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয়; প্রফেসর, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ও সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; প্রাক্তন অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাকালি নারায়ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ বৃত্তিপ্রাপ্ত, | জার্মানীর আলেকজান্ডার হুমবোল্ট ফেলোশীপ প্রাপ্ত, বাংলাদেশ একাডেমী অব | সায়েন্স এর গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত, পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কারের সাবেক নমিনেটর; জার্মানী, স্পেন, ইতালী, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ৬২টি, যার অধিকাংশ | আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ।