ভূমিকা ভগবান্ বেদব্যাস-প্রণীত অষ্টাদশ-মহাপুরাণ ও উপপুরাণ আমাদিগের পরম আদরের সামগ্রী সন্দেহ নাই। বস্তুতঃ পুরাণ যে আমাদিগের সর্ব্বপ্রধান ধৰ্ম্মগ্রন্থ, ইহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতে হইবে। আর্য্যজাতির নিত্য-নৈমিত্তিক ক্রিয়া, সন্ধ্যাবন্দনা, তর্পণ, হোম যাগ-যজ্ঞ, উৎসব, দেব-দেবী-পূজা, সদাচার যে কোন বিষয়ই হউক না কেন, তৎসমস্তই এই পুরাণ প্রদর্শিত পথাবলম্বনে নির্ব্বাহিত হইয়া থাকে। পুরাণে যাহা দৃষ্ট না হয়, তাহা আর কুত্রাপি কোন গ্রন্থেই লক্ষিত হইবার নহে। রাজনীতি, সমাজনীতি, সৃষ্টি, বিসৃষ্টি, বিশ্বোৎপাদন, ব্রহ্মতত্ত্ব সমস্তই পুরাণে বিষদরূপে বর্ণিত আছে। দুরাচার যবনদিগের অধিকার কালে আমাদিগের ঈদৃশ মহোপকারী হিতপ্রদ গ্রন্থসমূহ বিলুপ্ত, ছিন্ন ভিন্ন খণ্ডিত ও বিপর্যস্ত হইয়া যায় ৷ সে কারণেই সকল পুরাণের সম্পূর্ণখণ্ড প্রায় প্রাপ্ত হওয়া যায় না ; যাহাও পাওয়া যায়, তাহার অধিকাংশই ভ্রমপ্রমাদে পরিপূর্ণ। যতগুলি পুরাণ ও উপপুরাণ আছে, তন্মধ্যে শিবপুরাণ সকলের শীর্ষস্থানীয় বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এই গ্রন্থে শিবমাহাত্ম্য-বর্ণন প্রসঙ্গে রাজনীতি, ধৰ্ম্মনীতি, সমাজনীতি, সদাচার, দেবপূজা, দেবমাহাত্ম্য, বিবিধ মন্ত্র, অসংখ্য উপাখ্যান এবং বিবিধ পূজাপ্রণালীর বিষয় বর্ণিত আছে। যে ভাবে যে প্রণালীতে ইহা বর্ণিত, তদনুসারে কার্য্যসাধন করিলে যে, আশু চতুৰ্ব্বর্গ লাভে সমর্থ হওয়া যায়, তাহা বলা বাহুল্যমাত্র। আমরা এই ধর্ম্মগর্ভ পুরাণখানির সারবত্তা দেখিয়া নেপাল, তৈলঙ্গ দ্রাবিড় হইতে কয়েকখানি প্রাচীন হস্তলিখিত গ্রন্থ আনয়ন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, সেই সকল গ্রন্থ এরূপ জটিল অক্ষরে ও ভ্রমপ্রমাদে পরিপূর্ণ যে সহজে বোধগম্য করা একান্ত দুরূহ। অধিকন্তু একখানির সহিত অপরখানির স্থানে স্থানে প্রায় কিছু মাত্র ঐক্য নাই, আবার মধ্যে মধ্যে অনেক স্থলে ঐক্যও দৃষ্ট হয়। আমরা যে কয়খানি গ্রন্থ সংগ্রহ করি, তন্মধ্যে দুইখানিতে গ্রন্থের নাম বৃহৎ শিবপুরাণ বলিয়া উল্লেখ আছে ; এতদ্ভিন্ন একখানি শিবপুরাণ এবং অবশিষ্ট দুইখানি শিবপুরাণ-সংহিতা নামে বর্ণিত। ফল কথা, যবনাধিকারের পরে অস্মদ্দেশীয় অল্পবিদ্যা লেখকদিগের দোষে যে এইরূপ বিপর্য্যয় ঘটিয়াছে, তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই। আমরা কতিপয় সুবিজ্ঞ পণ্ডিতবর্গের মতানুসারে বৃহৎ শিবপুরাণখানিকেই প্রধান অবলম্বন করিয়া এই পুস্তক অনুবাদিত করিলাম। শিবপুরাণ ও শিবপুরাণ- সংহিতা নামক গ্রন্থের সহিত বৃহৎ শিবপুরাণের যে যে অংশের ঐক্য আছে, তাহাও ইহাতে সন্নিবেশিত হইল। অল্পবিদ্য সাধারণ লোকে সহজে এই বৃহৎ শিবপুরাণের তত্ত্ব অবগত হইয়া যাহাতে ধৰ্ম্মে মতি প্রবর্তিত করেন, সেই উদ্দেশ্যেই আমরা সরল পদ্যে ইহার অনুবাদ করিলাম, এক্ষণে সহৃদয় সাধুগণ সাদরে গ্রহণ করিলেই কৃতার্থমন্য হইব, কিমধিকমিতি । এই পুস্তকে আমার নাম ব্যতীত অন্য কোন সত্ত্ব রহিল না, প্রকাশকই ইহার সত্ত্বাধিকারী রহিলেন ৷