"ইতিহাসের দর্পণে খলিফা আল-মামুন" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও গবেষক প্রফেসর আল্লামা শিবলি নুমানি রহ. রচিত, আব্বাসি খেলাফতের প্রভাবশালী ও ইতিহাসখ্যাত শাসক, ইসলামি খেলাফতের নন্দিত-নিন্দিত খলিফা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক খলিফা মামুনুর রশিদের জীবনী, শাসন ও ইতিহাস নিয়ে লিখিত বই ‘ইতিহাসের দর্পণে খলিফা আল-মামুন’। বাগদাদ। ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নগরী। মুসলিম ইতিহাসের বহু স্মরণীয় অধ্যায়ের সাক্ষী এই প্রাচীন নগরী। এক সময় এই শহরজুড়ে ছিল ইলম এবং আলেম-উলামার প্রাচুর্য। ইমাম ফাররা, ইমাম কাসায়ি, খলিল ইবনে আহমদ; মোটকথা, ইসলামি জ্ঞানচর্চার আকাশে যে-নক্ষত্রগুলোর নাম জ্বলজ্বল করছে, তাদের এক বিরাট অংশের জীবনের উত্থান-পতন এই সমৃদ্ধ নগরী বাগদাদে। ইলমের উরুজ তথা উন্নতির সেই যুগে বাগদাদের সম্মানিত খলিফা ছিলেন মামুনুর রশিদ। খুলাফায়ে রাশেদিনের পর উমাইয়ারা এককভাবে একশো বছরের মতো শাসন করে মুসলিম বিশ্ব। উমাইয়াদের হাতে ইসলামি খেলাফত যতগুলো বড় বিজয় অর্জন করেছে, তা পরবর্তী বংশগুলোর খেলাফতে পাওয়া যায় না। উমাইয়াদের সমস্তরের বিজয় আব্বাসীয়রা ইসলামি খেলাফতকে উপহার দিতে না পারলেও তাদের বিজিত মুসলিম বিশ্বকে শক্ত হাতে তারা শাসন করেছে। বিজয়ের ধারাও অব্যাহত রেখেছে। আব্বাসি খেলাফতে মুসলিম বিশ্বকে সুগঠিতভাবে শক্ত হাতে শাসন ও বিজয় একই সাথে যিনি অব্যাহত রেখেছেন, তার নাম খলিফা মামুনুর রশিদ ইবনে হারুনুর রশিদ। আব্বাসি খেলাফত উমাইয়াদের থেকে যেই দিকটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে তা হলো, জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা। উমাইয়া খেলাফত যদি হয় তরবারির খেলাফত, আব্বাসি খেলাফত তাহলে তরবারি ও কলম— উভয়ের সমন্বিত রূপ। সেই জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতার চূড়ান্ত যিনি করেছেন, তিনি খলিফা মামুনুর রশিদ আব্বাসি। গ্রিক থেকে দর্শন ও বিজ্ঞানকে অনুবাদ করেছেন আরবিতে। এর জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন— দারুল হিকমাহ। এই সবকিছু মামুন করেছেন উদার মনে, অকপট ব্যয়ে। দারুল হিকমাহ মামুনের খেলাফতের আগে অন্য আব্বাসি খলিফার হাতে প্রতিষ্ঠিত হলেও, একে যথাযথ রূপ দিয়ে কাজ করিয়েছেন খলিফা মামুন। খলিফা মামুনুর রশিদের শত ইতিবাচক বিষয়ের সাথে কিছু নেতিবাচক বিষয়ও আছে। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে বিভিন্ন সময় রক্তে রঞ্জিত হয়েছে তার হাত। খলিফা মামুনের ইতিবাচক-নেতিবাচক— সকল কিছু নিয়ে বিস্তারিত ও বিশ্লেষণমূলক এই গ্রন্থটি লিখেছেন প্রফেসর আল্লামা শিবলি নুমানি। শাসনপদ্ধতি, করব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, তৎকালীন জ্ঞান গবেষণা, সমকালীন বিশিষ্ট মনীষীবর্গ— এমনতরো কোনো খুঁটিনাটি বিষয়ই লেখক বাদ রাখেননি। এই বইটি তৎকালীন খেলাফত, রাজ্যব্যবস্থা ও সমকালীন বিশ্ব ও ইসলামি শাসনের ইতিহাস বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।