"বাংলা একাডেমি বাংলা বানান অভিধান"বইটির মুখবন্ধ: বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম পুস্তিকা আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। ২০০০ সালে এই নিয়মের কিছু সূত্র সংশােধিত হয় এবং তা বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান'-এর পরিমার্জিত সংস্করণের পরিশিষ্ট হিসেবে মুদ্রিত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এবং সরকারি বিভিন্ন কাজে বাংলা একাডেমি প্রণীত বানানরীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পর্যালােচনা করা হয় এবং প্রয়ােজনীয় পরিমার্জনার পর পুনর্মুদ্রণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরিমার্জিত সংস্করণের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যগণ বিভিন্ন সময়ে একাডেমিতে কয়েকটি সভায় মিলিত হন। সভাসমূহে ‘বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ শীর্ষক পুস্তিকা ছাড়াও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ড, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম বিস্তারিত আলােচনার পর বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম'-এর পরিমার্জিত সংস্করণ চূড়ান্ত করা হয়। সভাসমূহে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক মােহাম্মদ আবদুল কাইউম, জনাব জামিল চৌধুরী, ড. গােলাম মুরশিদ, অধ্যাপক মাহবুবুল হক, অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী, ড. স্বরােচিষ সরকার, জনাব মাে. আলতাফ হােসেন ও জনাব শাহিদা খাতুন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। আশা করি, পরিমার্জিত সংস্করণ বাংলা বানানের প্রমিতকরণ ও সমতাবিধানে সহায়ক হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ কৃতিত্বে এম. এস-সি। পাশ করে বেশ কিছুকাল ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা করেছেন। তারপর সরকারি চাকরিতে দীর্ঘকাল যুক্ত থেকে অবসর নেন ১৯৯২-এ। সে-সময়েই টেলিভিশনের অন্যতম কর্তা হিসেবে কাজ করতে করতে বাংলা উচ্চারণের দিকে তাঁর ঝোক পড়ে। তখন তার দুটি বই প্রকাশিত হয় ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে ভাষা-শহীদ গ্রন্থমালা-র ‘বানান ও উচ্চারণ’ (১৯৮৫) এবং ‘ব্যাবহারিক উচ্চারণ অভিধান (১৯৮৮)। এর পর বাংলা বানালাবষয়ে তার আগ্রহ তৈরি হয় এবং সেই অনুসন্ধানেরই ফসল। ‘বাংলা একাডেমী বাংলা বানান অভিধান (১৯৯৪) এর অনেকগুলি সংস্করণ। অভিধান-রচনার ধারাবাহিকতাতেই তাঁর এই পূর্ণাঙ্গ অভিধান ‘শব্দসংকেত'। জামিল চৌধুরী ১৯৫২-র ভাষা-আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। বস্তুত পূর্ব-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সমস্ত প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতি ভাবনার সঙ্গেই কখনাে প্রত্যক্ষভাবে কখনাে পরােক্ষভাবে তিনি জড়িত। বাংলাদেশের সংগীত-প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট”। এবং “জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ’-এর প্রাক্তন সহ-সভাপতি। ' তার অভিধান-চর্চা বাঙালি সত্তার জাগরণে তার যে ভূমিকা তারই অংশ।