♦️বিস্ময়কর আনুগত্য ইমাম বুখারি রহ. হজরত আনাস বিন মালিক র. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ‘আমি আবু তালহা ও কিছু অতিথিকে মদ পরিবেশন করছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল: তোমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে? তারা জানতে চাইলেন: কোন খবরের কথা বলছ? সে বলল: মদ হারাম করা হয়েছে। উপস্থিত সবাই আমাকে বললেন: ‘আনাস! এই মটকাগুলো উল্টে দাও।’ লোকটির এই খবর শোনার পর কেউ এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেনি। কেউ মদপানে প্রবৃত্তও হয়নি।’
কী বিস্ময়কর আনুগত্য!
কী অদ্ভুত আত্মসমর্পণ!!
আজ একজন ধূমপায়ীর সঙ্গে আলোচনা করে দেখো; তোমাকে সে প্রশ্ন করবে: অনেক বছর থেকে আমি ধূমপান করে আসছি; এই অভ্যাস কীভাবে ছাড়ব? একজন গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলো; সে বলবে: এই কাজ না করে আমি কীভাবে থাকব? এটি কীভাবে সম্ভব? তুমি যদি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো, তবে দেখবে তাদের হায়াতের হাকিকত ও চিন্তাপ্রক্রিয়ার সঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াতের কত বিশাল পার্থক্য! إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ “মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই, যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।” বর্তমানে তুমি যদি কারও বিবেকে নাড়া দিয়ে হৃদয়ে ঝাঁকি দিয়ে বলো, টিভির এই রঙ্গিন পর্দা ও তাতে সিনেমা দেখা সম্পূর্ণ হারাম। সে বলবে: হাঁ, হারামই তো। কিন্তু এর বিকল্প কী আছে?
কী আশ্চর্য! কোথায় পূর্বসূরি আর কোথায় উত্তরসূরি!! কোথায় সেই আনুগত্য আর কোথায় সেই আত্মসমর্পণ!!! দ্বীনের অনুসরণ ও হারাম বর্জনের জন্য কী বিকল্প থাকা শর্ত?
চলো... আমরা হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করি এবং আত্মাকে পবিত্র করে তুলি। ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করতে হলে, আল্লাহর আনুগত্যের সুখ অনুভব করতে হলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে আমাদের অবশ্যই আত্মসংশোধনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির উপায় বের করে দেন।”
ড. শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম। আরববিশ্বের খ্যাতনামা লেখক, গবেষক ও দায়ি। জন্মগ্রহণ করেছেন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের উত্তরে অবস্থিত ‘বীর’ নগরীতে বিখ্যাত আসিম বংশের কাসিম গােত্রে। তার দাদা শাইখ আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ। বিন কাসিম আল-আসিমি আন-নাজদি রহ. ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের প্রখ্যাত ফকিহ। তাঁর পিতা শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান রহ.ও ছিলেন আরবের । যশস্বী আলিম ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা। শাইখ আব্দুল মালিক। আল-কাসিম জন্ম সূত্রেই পেয়েছিলেন প্রখর মেধা, তীক্ষ্ণ প্রতিভা আর ইলম অর্জনের অদম্য স্পৃহা। পরিবারের ইলমি পরিবেশে নিখুঁত তত্ত্বাবধানে বেড়ে । উঠেছেন খ্যাতনামা এই লেখক। আনুষ্ঠানিক পড়াশােনা শেষ করে আত্মনিয়ােগ করেন লেখালেখিতে—গড়ে তােলেন ‘দারুল কাসিম লিন নাশরি ওয়াত তাওজি’ নামের এক প্রকাশনা সংস্থা। প্রচারবিমুখ এই শাইখ একে একে উম্মাহকে উপহার দেন সত্তরটিরও অধিক। অমূল্য গ্রন্থ। আত্মশুদ্ধিবিষয়ক বাইশটি মূল্যবান। বইয়ের সম্মিলনে পাঁচ ভলিউমে প্রকাশিত তাঁর ‘আইনা নাহনু মিন হা-উলায়ি' নামের সিরিজটি পড়ে উপকৃত | হয়েছে লাখাে মানুষ। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই সিরিজের অনেকগুলাে বই। আজ-জামানুল। কাদিম’ নামে তিন খণ্ডে প্রকাশিত তার বিখ্যাত। গল্প-সংকলনটিও আরববিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের জন্য তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় ছয় খণ্ডে রচনা। করেছেন রিয়াজুস সালিহিনের চমৎকার একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ। এ ছাড়াও তাঁর কুরআন শরিফের শেষ। দশ পারার তাফসিরটিও বেশ সমাদৃত হয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে শাইখের দীর্ঘ কর্মময় জীবন কামনা করি।