মনোয়ারা ইসলাম তাঁর এই গ্রন্থে নিজের কথাই লিখেছেন। নিজের কথা লিখতে গিয়ে তিনি তাঁর সহকর্মীদের কথা লিখেছেন। তাঁর কাছাকাছি মানুষকে নিয়ে লিখেছেন। সমাজ, দেশ, দেশের মানুষকে নিয়ে লিখেছেন। তাঁর লেখায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারীর কথা, দেশের কথা, ইতিহাসের কথা এসেছে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই গ্রন্থ আমরা বাংলাদেশের প্রায় ছয় দশক কালব্যাপী বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক ঘটনাসমূহের একটি দলিল হিসেবে পাই। তাঁর কবিতায়, গদ্যে ’৫২-এর ভাষা-আন্দোলন এসেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতাপরবর্তী দেশের বিপন্ন সমাজব্যবস্থার কথা এসেছে। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সেখানকার সহকর্মীদের কথা এসেছে। বিশেষত অধস্তন কর্মচারী, যাদের একনিষ্ঠ শ্রম, নিষ্ঠা আর সহযোগিতা ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যেতে পারে না, মনোয়ারা ইসলাম তাদের অবদানকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করেন, তাঁর লেখাতে সেটি স্পষ্ট ধরা পড়ে। তাঁর লেখায় বাঙালির জীবন, বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের কথা, স্বাধিকার-স্বাধীনতার কথা, আনন্দ-বেদনা, অভাব-অনটনের কথা এসেছে। উত্তরণ ও এগিয়ে যাওয়ার কথা এসেছে। ব্যক্তিগত আনন্দ, বেদনা, দ্রোহ, প্রেম, অভিমানের কথা এসেছে। অপেক্ষমাণ আমি সময়ের দ্বারে বাঙালির আটপৌরে অবস্থান থেকে আদিগন্ত বিস্তৃত জীবনের কথা বলে। ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ যেন বাঙালির শাশ্বত জীবনযাত্রার হিরণ্ময় চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গ্রন্থ বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যে একটি অনুপম সংযোজনা। একটি ঐতিহাসিক দলিল। হৃদয়স্পর্শী আত্মজৈবনিক সৃষ্টি। -ড. আশরাফ সিদ্দিকী ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮