"প্রিয় শত্রু, তোমাকে ধন্যবাদ" বইয়ের পিছনের লেখা: শুধুমাত্র মতের মিল হয়নি বলে যখন কেউ আমাকে গালমন্দ করল, এমন পরিস্থিতিতে নিজের রাগ গিলে ফেলে নিজেকে শান্ত রাখতে পারার সেই স্মৃতি মনে পড়লে ভালােই লাগে। যত যা-ই হােক, আমাদের মাঝে মতপার্থক্যের চেয়ে ঐক্যমত্যের সংখ্যাই বরং অনেক বেশি। ভাবতে ভালােই লাগে যে, আল্লাহ নিজেকে সংবরণ করতে আমাকে সাহায্য করেছেন। মাথা গরম করে অনর্থক ও তুচ্ছ বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। না হলে আমি হয়তাে সচেতন বা অবচেতনভাবে নিজের নফসকে বিজয়ী করার নিয়তে তর্ক শুরু করতাম—সত্যকে বিজয়ী করার জন্য না। এরকম পরিস্থিতিতে স্বার্থ ও কুতর্ককে জায়েয করার জন্য অনেকরকম চটকদার সাইনবাের্ড লাগাতে ইচ্ছে হয়। “সত্য প্রকাশ করা”, “সঠিক বিষয় উন্মােচন” আরাে কত কী! নিজেকে এই ঝোঁকের কাছে সঁপে দেওয়া মানে দুর্গম ও প্রাণহীন এক মরুভূমিতে আছড়ে পড়া। ধর্মীয় চেতনা অন্তরে লালন করে আমাদের উচিত ছিল আদর্শ ও সদাচারী মানুষ হওয়া—যাদের পারস্পরিক লেনদেন হবে ইতিবাচক। দুর্ভাগ্যবশত অনেকে এর ফলে উল্টো সংকীর্ণমনা, খিটমিটে ও বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। কখনও তাদের জবা তাদের উদ্বুদ্ধ করে সারাক্ষণ অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াতে। এই ধরণের মানুষদের সকলে এড়িয়ে চলতে পারলেই বাঁচে। কারণ, এদের কাছে গেলেই নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে নিজের ধার্মিকতার ইন্টারভিউ দেওয়া লাগবে: “আপনি কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী? কোন কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করেন? আপনার শাইখ কে? অমুক অমুক বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?” এই বইয়ের অধ্যায়গুলাে আসলে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে লেখা আমার কিছু প্রবন্ধ। তবে এগুলাে পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। প্রতিটিরই আলােচ্য বিষয় হলাে মতানৈক্য ও দ্বন্দ্ব এবং এসব ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়। এ সংক্রান্ত আলােচনার যেসব দিক আমার বিগত প্রবন্ধগুলােতে ছুটে গিয়েছিল, সেগুলাের উপর আমি নতুন করে লিখেছি।
সালমান বিন ফাহদ বিন আব্দুল্লাহ আল আওদা (জন্ম: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৬) আবু মু'আদ নামে পরিচিত। তিনি একজন সৌদি আলেম এবং মুসলিম স্কলার। তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স’ এর একজন সদস্য এবং ইসলাম টুডে ওয়েবসাইটের আরবি সংস্করণের পরিচালক। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং পত্রিকায় কলামলেখক হিসেবেও কাজ করেন। সৌদি আরবের আল-কাসিমের বুরাইদা শহরের নিকটবর্তী আল-বাসর শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি তার শৈশব আল-বাসরে অতিবাহিত করেছেন, তারপরে বুরাইদাতে চলে আসেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আল-আউদার পুত্র হিশাম এবং তার স্ত্রী হায়া মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সা'দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক আইন শাসনে বিএ, এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আবদুল আল-আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ, মুহাম্মদ ইবনে আল উসাইমিন, আবদুল্লাহ আবদাল রহমান জিবরিনের মতো পণ্ডিতদের কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে আল-কাসিমের বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হন। ১৯৯০ সালে বুরাইদার কেন্দ্রীয় মসজিদেও সাপ্তাহিক পাঠদান শুরু করেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৫০টি বই রচনা করেন।