"অভিশপ্ত আত্মা (ভৌতিক উপন্যাস)" বইয়ের পেছনের কভারে লেখা:শাহেদ ধীরে ধীরে চোখ খুলল। চোখ খুলে সে যা দেখল তা এক কথায় ভয়ংকর। সে শুয়ে আছে তাদেরই মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি ল্যাবের ডিসেকটিং টেবিলের ওপর। এই টেবিলে মানুষের শরীর ব্যবচ্ছেদ করা হয়, কাটাছেড়া করা হয়। শাহেদের মাথার ওপর উজ্জ্বল আলাের কতকগুলাে বাতি জ্বলছে। সেই আলােতে সে তার ডানপাশে মতিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখল। মতির হাতে ছুরি, কাঁচি, ফরসেপ-সহ লাশকাটার নানারকম অস্ত্রপাতি। সে সেগুলাে ডিসেকটিং টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখছে। শাহেদ মুখে কিছু বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে, গলা দিয়ে কোনাে শব্দ বের হচ্ছে না। শরীরের শক্তিও নিঃশেষপ্রায়। কোনােমতে মাথাটা তুলতে পারলেও শরীরের অন্য কোনাে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সে নাড়াতে পারছে না। এমনকি হাত-পায়ের আঙুল পর্যন্ত না। তার মনে হচ্ছে শক্তিশালী চেতনানাশকের সাহায্যে তার গলার ওপরের অংশ ছাড়া সমস্ত শরীরকে অবশ করে রাখা হয়েছে, অথচ অনুভূতি ঠিকই আছে। তা না হলে সে কখনাে ঠান্ডা অনুভব করত না। আর এই অনুভূতি থাকার কারণে শরীর ব্যবচ্ছেদের ভয়ংকর নারকীয় যন্ত্রণাটা তাকে ভােগ করতে হবে। কারণ মতি যখন তার শরীরে ছুরি চালাবে তখন অনুভূতি থাকার জন্য ব্যথাটাকে সে কোনােভাবেই উপেক্ষা করতে পারবে না। এরকম ভাবতেই শাহেদের বমি বমি ভাব এলাে। কিন্তু সে বমি করতে পারল না। কারণ ততক্ষণে মতি শরীরের ওপর ধারালাে ছুরি নিয়ে ঝুঁকে এসেছে।
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।