একজন লেখকের লেখা তখনই পাঠকের কাছে সমাদৃত হয় যখন তাঁর লেখায় সমাজ ও জীবনের বাস্তবদর্শন সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়। কবি মোঃ দেলোয়ার হোসেন জীবনকে যে খুব কাছ থেকেই দেখেছেন তা বোঝা যায় তাঁর কবিতা পড়লেই। যখনই রাষ্ট্র বা সমাজের কোথাও কোনো অন্যায় বা অসহিষ্ণুতা দেখেছেন তখনই প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসাবে তুলে নিয়েছেন কাগজ-কলম।
কবি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বর্তমান সময়ের একজন উজ্জ্বল প্রতিভাধর কবি। তাঁর কবিতায় যেমন সমাজের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে- “চলছে দেশে হানাহানি / যাচ্ছে ভুলে মানামানি / জীবন নিয়ে টানাটানি জিন্দালাশের গেম।” সমাধানের পথও দেখিয়েছেন তিনি- “দুঃখীর দুঃখে অংশী হলে / মানবতা শান্তি পায়।” সামাজিক অবক্ষয় দেখে আক্ষেপও করেছেন- “আজো কেন চলছে গুলি মরছে মানুষ, একাত্তরে এই কি তোমার শপথ ছিল?” স্বপ্নভঙ্গের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে অভিমানী কবি লিখেছেন- “কতদিন হয়ে গেল হারিয়েছি সুখ/ দেখি না এখন আর আয়নাতে মুখ।” আবার, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসে লিখেছেন- “লুটে নেবো জয়, আমি বিস্ময়” -সত্যিই তিনি 'বিস্ময়'! পা-ুলিপিটি পড়ার সময় কখনো মনে হয়নি এটা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি। তিনি 'বিস্ময়' বলেই হয়তো হতাশার বুকে পদাঘাত করে সদর্পে ঘোষণা করতে পারেন- “আমি অবিনাশী বিনাশের বাঁশি / জরাতেও হাসিমুখ, কফিনের বুকে বাঁচি ধুঁকে ধুঁকে / বিষাদেও লাগে সুখ।” কিংবা, বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারেন- “আমি খেয়ালী বিধির বিধান বিনাশে বিষধর এক সর্প।” তাঁর অধিকাংশ লেখায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার প্রতিধ্বনি শোনা যায়, তাই অনেকেই তাঁকে 'এ যুগের বিদ্রোহী কবি' বলে অনুপ্রাণিত করেন। শেষ দিকে আছে শিশু-কিশোর উপযোগি বেশ কয়েকটি মজার ও শিক্ষামূলক ছড়া-কবিতা যা ছোটদেরও আনন্দ দেবে। “বেদনার বাঁশি” কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও বইটি পড়ে পাঠকহৃদয় তৃপ্ত হবেই- একথা বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করি। শুভেচ্ছান্তে বি.কে স্বপন