"রাজায়েলে আমাল" বইটির 'প্রসঙ্গ কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ একটি পানি শূন্য গ্লাসের ভিতর যখন পানি ঢালা হয় তখন উক্ত গ্লাসে থাকা বায়ু বের হয়ে আসে এবং পানির জন্য স্থান করে দেয়। যদি গ্লাসের বায়ু বের হতে না পারতাে তবে তাতে পানি প্রবেশ করানাে যেত না। তেমনিভাবে মানুষের অন্তর খারাপ স্বভাব দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং এই খারাপ স্বভাবগুলাে যদি দূর করা না যায় তবে তাতে ভালাে স্বভাবগুলাে প্রবেশ করানাে যাবে না। আর এ রাজায়েল বা খারাপ স্বভাবগুলাে দূর করতে এবং ফাজায়েল বা সৎ-স্বভাবগুলাে অর্জন করতে চাইলে অবশ্যই ঐসব স্বভাবগুলাের পরিচয়, উদ্ভবের কারণ, আলামত এবং অন্তর থেকে তা দূর করার উপায় বা চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সে লক্ষ্যেই তাযকিয়া পাবলিকেশন্স-এর পক্ষ থেকে অত্র কিতাবখানি আপনাদের বরাবর পেশ করা হলাে এবং নাম রাখা হলাে ‘রাজায়েলে আমাল: আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার'। ফাজায়েলে আমাল বা সৎকর্ম দ্বারা নিজের চরিত্রকে সজ্জিত করতে চাইলে প্রথমে রাজায়েলে আমাল বা অসৎকর্মগুলাে থেকে নিজেকে মুক্ত করা আবশ্যক। আর এ জন্য চেষ্টা সাধনা করা বা ইলেম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফরজে আইন।
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।