"কারবালা ও হজরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাত" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ “কারবালা ও হজরত ইমাম হােসাইন (আ.)-এর শাহাদাত” সাইয়্যেদুশ শুহাদা হজরত ইমাম হােসাইন ইবনে আলি (আ.)-এর জীবন চরিত সম্পর্কে রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'লােহুফ’ এর বাংলা অনুবাদ। প্রসিদ্ধ মনীষী সাইয়্যেদ ইবনে তাউস গ্রন্থটি আরবি, ভাষায় রচনা করেছেন। পরে তা অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বলা যায় যে, ইমাম হােসাইন (আ.)-এর শাহাদাত সম্পর্কিত সংক্ষিপ্তাকারে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ। এর কলেবর ছােট হলেও প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। বইখানি একটি অনুবাদক পরিষদ কর্তৃক ফার্সি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। বইটি তিনটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত : প্রথম অধ্যায়- জন্ম থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত ইমাম হােসাইন (আ.) এর জীবন চরিত। দ্বিতীয় অধ্যায়- আশুরার দিন কারবালার ঘটনা ও শহিদগণের নিহত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ। তৃতীয় অধ্যায়- হজরত ইমাম হােসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর থেকে আহলে বাইতের মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত সময়কালের খুঁটিনাটি ঘটনাবলির বিবরণ। ইমাম হােসাইন (আ.)-এর ঐতিহাসিক শাহাদাতের সঠিক তথ্যাবলি জানার জন্য নির্ভরযােগ্য পুস্তকাদির নিতান্তই অভাব। বিশ্বের সর্বকালের শােষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে শহিদদের নেতা ইমাম হােসাইন (আ.) আত্মত্যাগের যে মহান ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা ক্ষমতাসীন স্বার্থান্বেষী মহলের অব্যাহত শত্রুতার কারণে দুনিয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারেনি। মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, ইমাম হােসাইন (আ.) একদল কুফাবাসী অনুসারীদের মিথ্যা আশ্বাসের উপর নির্ভর করে কারবালায় গিয়ে এক মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হন। প্রকৃত ঘটনা না জানার কারণেই সর্বযুগের শহিদের নেতা ইমাম হােসাইন (আ.) সম্পকে এ ধরনের ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ রয়ে গেছে। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, ইয়াজিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যেও যদি তিনি ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন তাহলে একদল সশস্ত্র অনুসারী যােগাড় করে সঙ্গে নিতেন, যা তিনি করেননি। এ যাত্রার সিদ্ধান্তের কথা জেনে তাঁর অনেক শুভানুধ্যায়ী এর ভয়াবহ পরিণতির কথা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমাম তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, আর তাই তিনি কারাে কথায় কান দেয়ার প্রয়ােজন মনে করেননি। এ আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র, জ্ঞানের দরজা হজরত আলি ও মহিয়সী রমণী জান্নাত নেত্রী হজরত ফাতেমাতুয যাহরার সন্তান। যিনি স্বয়ং বেহেশতের যুবকদের নেতা তিনি এ ধরনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অন্য কারাে দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন, এটা চিন্তাও করা যায় না। তদুপরি হুজুর (সা.) তাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে, কারবালার মাটিতে তিনি শহিদ হবেন। মহান আল্লাহ্ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে দিয়ে কারবালার পবিত্র প্রান্তরে এমন এক শােকাবহ হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা করাবেন যা সর্বকালের স্বাধীনতাকামী মজলুম মানুষের জন্য একমাত্র আদর্শ ও প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়ে থাকবে। এ মহান আত্মত্যাগ ও শ্রেষ্ঠ কোরবানির মাধ্যমে যে মহামূল্যবান শিক্ষা তিনি রেখে গেছেন তা হচ্ছে, জালিম শাসকরা যত শক্তিশালীই হােক না কেন সত্যপন্থীদের দায়িত্ব হচ্ছে ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে যার যা কিছু সহায়-সম্বল রয়েছে তা নিয়ে একমাত্র মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করে প্রতিপক্ষের সমরাস্ত্রের মােকাবিলায় শেষ রক্তবিন্দু ঢেলে দিয়ে সত্যের সাক্ষ্যদান করা। একমাত্র এ ধরনের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই মেকী মানবতার কল্যাণকামী ও মেকি ইমানের দাবিদারদের মুখােশ : উন্মােচিত হয়ে তাদের বিভৎস কুৎসিত চেহারা নগ্নভাবে দেখা দেবে যা তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনগণের ঘৃণা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়ে অনিবার্য ধ্বংস ও পতনকে ত্বরান্বিত করবে। বিশ্বব্যাপী মিথ্যা ও জলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সত্যপন্থীদের এ সংগ্রামে ইমাম হােসাইন (আ.)-এর শাহাদাত মূল্যবান এক আলােকবর্তিকা হিসাবে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করবে। অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে হলেও এ বইটিতে ইমাম হােসাইন (আ.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক ও ঘটনাবলি নির্ভুল ও বিশ্বস্ততার সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে।