‘শিকওয়া ও জওয়াবে ‘শিকওয়া’ আল্লামা ইকবালের আলােড়ন সৃষ্টিকারী কবিতাসমূহের অন্যতম। বলা বাহুল্য ইকবাল রচিত ‘শিকওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝেই কতিপয় আলেম সম্প্রদায়ের ষড়যন্ত্রে তাঁকে কাফের সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শক্ত হাতে তার প্রতিবাদে ‘জওয়াবে ‘শিকওয়া’ লিখে সেই সমস্ত আলেম সম্প্রদায়ের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। জওয়াবে শিকওয়া প্রকাশের অল্প সময়েই মধ্যেই তার বিরুদ্ধে কাফের ফতােয়া তুলে নিতে বাধ্য হন জ্ঞানপাপী মােল্লার দল। তারা ইকবালের সুফিমন ও আল্লাহর প্রতি একজন প্রেমিক হৃদয়ের আহাজারি বুঝতে পারেননি। যেমন- আলেম সমাজ বুঝতে পারেননি পারস্যের বিখ্যাত সুফিসাধক হুসাইন বিন মনসুর হাল্লাজকে। ইকবালের ‘শিকওয়া ও জওয়াবে ‘শিকওয়া’ দু’টি কবিতাই আঞ্জুমানে হেমায়েত-ই-ইসলামের সভায় যথাক্রমে ১৯১১ ও ১৯১২ সালে পঠিত হয়েছিল। “শিকওয়া’ পাঠে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এটার জন্য ইকবালকে যে প্রবল বাধা ও সমালােচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অন্য কোন লেখার জন্য সে রকম হয়নি। ‘শিকওয়া মানে অভিযােগ- আল্লাহর নামে অভিযােগ। ৩৬টি স্তবকের দীর্ঘ কবিতার মাধ্যমে কবি তিমির-তাড়িত দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম জাতির করুণ পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে আল্লাহর নামে অভিযােগ পেশ করেছেন । বাহ্যিক দৃষ্টিতে অভিযােগগুলাে অত্যন্ত শ্রুতিকটু । প্রতিবাদের মূলে ছিল এটাই পৃথিবীর সব সাহিত্যেই দুই প্রেমিক হৃদয়ের মান-অভিমান। উপজীব্য বিষয় কবিরা তেমন কোন এক প্রেমিক সত্তাকে কেন্দ্র করে সাহিত্যে তা রসঘন করে উপস্থাপন করেন। সুফি ইকবালের পরম প্রিয় সত্তা আল্লাহ্ রাব্বল ‘ইয্যত। তাঁর প্রতিই তাঁর মান-অভিমানের কথামালা'। স্বজাতির চরম দুর্দশা দর্শনে মর্মাহত হৃদয় নিয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে অভিমান-ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নালিশ করেছেন। মুসলমানের এহেন অবস্থা সত্ত্বেও তিনি কেন নির্বিকার-এটাই কবির মর্মবেদনার কারণ।