একটা পোকার কথা আমার খুব মনে পড়ে। আমার জীবনের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনার নেপথ্যে আছে সে। তার নামটি বেশ জবরদস্ত। ঢোলকলমি পোকা। সে সময় আমাদের জনপদে বেশ আলোড়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল ঈশ্বরের এই ক্ষুদ্র সৃষ্টি। আলোড়নের বদলে আতঙ্ক বললেই মানানসই হবে। অতটুকু পোকার কী ক্ষমতা! তারা এতটাই বিষাক্ত ছিল, যে দূর থেকেই মানুষজনকে আক্রান্ত করতে পারতো। মানুষজন তাদের দেখে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতো, অথবা তাদের গলা থেকে রক্ত ছলকে পড়তো। কোনো ডাক্তারের সাধ্য ছিল না এর প্রতিকার করার। এমন একটি রোমাঞ্চকর বিষয় নিয়ে যে কেউ শিহরিত হবে স্বাভাবিকভাবেই। আমিও হয়েছিলাম। নিজেকে নিরাপদে রেখে দূর থেকে ভয়ংকর সব বিপদের বর্ণনা পড়ার মত আনন্দ আর কিছুতেই নেই! কীভাবে ঢোলকলমি পোকা এলো, তাদের উদ্দেশ্য কী, কীভাবে তারা মানবজাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে এসব নিয়ে জ্ঞানী মুরুব্বিরা নানারকম গা ছমছমে গল্প বলতেন। এর আগে ভয় পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যেসব গল্প রচিত হয়েছিল, সেগুলোতে যথেষ্ট সৃষ্টিশীলতার পরিচয় তারা দিতে পারেন নি। দিনের পর দিন আমাদের শোনানো হত জ্বিন এসে ময়রার দোকান থেকে মিষ্টি খেয়ে যাচ্ছে, অথবা মেছো ভূত এসে নাকি সুরে ইলিশ মাছের জন্যে কান্নাকাটি করছে।