আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন টেকনােলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এ্যারােনটিকসের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার সাথে পড়ত আরাে দুজন এশিয়ান- সুমিত্রা পাঠক আর হাে ই সুসান। সুসান জাপানি হলেও চালচলনে ছিল পুরােপুরি ইউরােপীয়। তার সাথে আমার সম্পর্কটা তাই বন্ধুত্ব পর্যন্ত গড়ায়নি। সুমিত্রার বাড়ি ভারতের কোচিনে। বাবা লােক্স সদস্য; প্রচুর বিষয়-সম্পত্তির মালিক। মাত্র ক'দিনেই সুমিত্রা আমার বন্ধু হয়ে উঠেছে। মধ্য ডিসেম্বরের কথা। অনেক শীত পড়েছে। তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। প্রাকটিক্যাল ক্লাস শেষে হলে ফেরার জন্যে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর সুমিত্রা। পাশে এসে দাঁড়াল আমাদেরই ক্লাসের এক মেয়ে মার্সি। গায়ে ধূসর রঙের ওভারকোট, মাথায় হালকা নীল রঙের একটা হ্যাট; গভীর প্রশান্ত চোখজোড়ায় দৃষ্টি ধরে রাখা যায় না। সব মিলিয়ে চেহারায় কী একটা অদ্ভুত আভিজাত্য আছে তার সুমি বলল- মার্সির সাথে তােমার আলাপ আছে? মার্সিকে আমি চিনি হিউস্টনে আসার ক'দিন পর থেকেই। যেদিন আমাদের প্রথম ক্লাস শুরু হবে সেদিন সে ডিপার্টমেন্টের করিডােরে একা একা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে ছিল। কোন ব্যস্ততা নেই, কোন উদ্বেগ নেই। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তার সাথে কথা বলি। কিন্তু সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। গত এক মাস ধরে আমি তাকে লক্ষ করে আসছি। সে ঐ প্রথম দিনের মতই রয়ে গেছে।