প্রতিবছর ত্রিশ লাখ তরুণ পড়ালেখা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারিসহ নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয় দশ লক্ষ। আর এভাবে বছর বছর বেকার বাড়তে থাকে। হিসাবমতে, বর্তমানে দেশে বেকার জনগোষ্ঠী চার কোটির অধিক। বিশাল জনসংখ্যার এদেশে চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা হওয়া-ই হতে পারে বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান অবলম্বন।
চাকরি করবো না ব্যবসা করবো- এ জটিল সিদ্ধান্তের একটা সহজ সমাধান আপনি একান্তে বা পরিবারের সাথে বসে ঠিক করতে পারেন। আমাদের দেশে নিম্ন মধ্যবিত্ত লোকসংখ্যা বেশি। ফলে, চাকরি করাটাকে সবাই স্রেফ ভাবেন। আর সরকারি চাকরি হলে তো এলাকার সুন্দরী মেয়েটাও আপনার জন্য। অনেকে ব্যবসা করার কথা ভাবেন। নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা যায়। উন্নত, সুন্দর ও স্বাধীন জীবন যাপনে ব্যবসায়ীরা জীবনকে উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু বাবার ব্যবসা না থাকলে, ব্যবসা করার কথা অনেকেই ভাবতে পারেন না। কারণটা পরিষ্কার - টাকা। অভিজ্ঞতা ছাড়া এদেশে চাকরি যেমন সোনার হরিণ, জামানত ছাড়া ব্যাংক আপনাকে ঋণ দিবে কোন দুঃখে? সদ্য পড়াশোনা শেষ করে তাই আপনি ব্যবসা করার চিন্তা ভুলেও ভাবতে পারবেন না, যদিনা আপনার পরিবার আপনার পাশে দাঁড়ায়। সত্য হচ্ছে, আশপাশের দিকে তাকানোর দরকার নেই। আমাদের কারো বাবা মা চায় না- ব্যবসা করি, কারো বাবা মায়ের জমানো টাকা নেই, কারো অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই আর কারো এই মুহূর্তে চাকুরি না হলে পরিবার খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজবে। তৃতীয় বিশ্বের আমাদের মতো একটা দেশে একটা তরুণ কতো কতো দুঃখ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়- তা সবারই জানা। মাকড়সার জালের মতো চারিদিকে সমস্যা। ঘরে বাইরে কোথাও একটু আশ্বাস নেই, শুধু হতাশা। জীবনের সবচে সুন্দর সময়ে বইয়ের পাতা পাতা মুখস্থ করে যখন চাকরি না পেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, তখন চারিদিকে পরিহাস ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জুটে না। মুখে উপদেশের বুলি আর মিথ্যা আশ্বাস সবাই দেয় কিন্তু...। মোটিভেশন ও স্বপ্ন পথ চলতে বলে কিন্তু যেখানে কোন পথই নেই, চলবে কি করে? তবুও জীবন ও সময় থেমে থাকে না, চলে যায়, চলে যায় এই সেই করে। আহারে জীবন! নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন। যে এই জীবন যাপন করেনি তার কাছে হয়তো সুখ আছে কিন্তু জীবনের সঠিক মানেটা নেই।
আমাদের বিশাল জনসংখ্যা আছে, আপাতদৃষ্টিতে ছোট এই দেশে জনসংখ্যাকে সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা জনসংখ্যার সমস্যা সমাধান করতে পারবো না। যেটা পারবো আর তা হচ্ছে চাকরি নয়, নিজেরা অন্তত নিজেদের জন্যে উদ্যোক্তা হতে পারবো। শুরুর দিকে দশ বারজনকে চাকরি হয়তো দিতে পারবো না তবে নিজের ও পরিবারের সমস্যা মেটাতে পারবো। নিজের ব্যবসা হবে, অন্যের প্রতিষ্ঠানে যে পরিশ্রম করবো সেই পরিশ্রমটা নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য করবো। নিজের নামের বাইরে আরেকটা নাম হবে, যে নামেও লোকে আমাকে চিনবে। অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে যে পারিশ্রমিক পাবেন, সেটা নিজের ছোট প্রতিষ্ঠান থেকেও পাবেন। তবে যেটা অতিরিক্ত পাবেন, তা হচ্ছে নিজের একটা ব্র্যান্ড, নিজের সন্তানসম ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান। উদ্যোক্তা হতে হলে মূলধন লাগে, শুধু স্বপ্ন ও ভালো আইডিয়া দিয়ে হয় না তা ঠিক। পরিশ্রম হলো আপনার মূলধন, অলসতাকে ঝেড়ে পরিশ্রম করে প্রত্যেকে হয়ে উঠতে পারি এক একজন সফল উদ্যোক্তা।
আমার বিশ্বাস যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, আজ থেকে ৪/৫ বছর পরে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে দেখতে চায়- তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ, ১০১ টি আইডিয়া এবং সফল মানুষদের সমস্যা ও সমস্যা কেটে উঠে সফল হওয়ার গল্প ‘উদ্যোক্তা ও ১০১ বিজনেস আইডিয়া’। উত্তরাধিকারী সূত্রে বাবা-দাদা ব্যবসায়ী ছিলেন না বলে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না- তা ঠিক নয়। আবার অন্যসবকিছুর মতো ব্যবসাটা শিখতে হয়, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানা থাকা দরকার। শুধু একটি ভালো আইডিয়া আছে, প্রস্তুতি নেই ঝাপিয়ে পড়লাম- বিষয়টা এতো সহজও নয় আবার জটিল জটিল কোন তত্ত্বও মুখস্থ করতে হবে না। আপনার আশেপাশের ব্যবসা সম্পর্কে জেনে রাখা, কিভাবে মূলধন ও বিনিয়োগ পাবেন তাও খুঁজে বের করার পদ্ধতি এবং ব্যাংক কখন কিভাবে আপনাকে লোন দিবে সে উপায় নিয়েও এ বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। ‘উদ্যোক্তা ও ১০১ বিজনেস আইডিয়া’ বইটি পাঠে আপনি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হবেন এমনও নয় আবার না পড়লেও আপনি সুন্দরভাবে আপনার বুদ্ধিমত্তা খরচ করে ব্যবসা করতে পারবেন। আমি বলব- এই বইটি তাদের জন্য যারা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী কিংবা যাদের মাথায় ভালো কোন স্টার্টআপ বিজনেসের আইডিয়া নেই বা ব্যবসা করছেন কিন্তু এখনও সুন্দরভাবে নিজের ব্যবসা গুছিয়ে নিতে পারেননি তাদের জন্য এই বই।
আবদুল হাকিম নাহিদ, লেখক ও একজন সফল উদ্যোক্তা। পনের অক্টোম্বর উনিশশো নব্বই সালে হাতিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক পড়ার সময় সাপ্তাহিক দ্বীপশিখা দ্বীপশিখা পত্রিকা পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেন এবং একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষে ভিন্ন কিছু করার অভিপ্রায়ে উদ্যোক্তা হওয়ার মিশনে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন 'দাঁড়িকমা প্রকাশনী'। নিজের একান্ত প্রচেষ্টা, মেধা ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে অল্প সময়েই নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ, শুধু চাকুরীর পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে- তিনি এই স্বপ্নই দেখেন।