"আয়েশা (রা.)-র বিয়ে ও বাল্যবিবাহ”বইটির ১ম ফ্লাপের কিছু কথা: ২০০৮ এ ও কানাডায় বিয়ের বৈধ বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৮। ২০০৮-তে তারা একটি ভয়ানক অপরাধ আইন পাশ করে বিয়ের বয়স পরিবর্তন করে ফেলে। এখন আমাদের এমনিতেই প্রশ্ন। আসতে পারে, এতাে শত শত বছর কেন চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে বিয়ে করতে পারত এবং সে সাবালিকা ও ম্যাচুরড হিসেবে গণ্য হত, হঠাৎ ২০০৮ তে তাদের কী হলাে? কেন তারা বিয়ের বয়স সংশােধন করলাে? উত্তর হলাে, এসবের কারণ হচ্ছে স্ববিরােধী মূল্যবােধ ও নৈতিকতা। আমাদের আইনই কেবল সঙ্গতিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন মেয়ে যদি সাবালিকা হয়, তখনই কেবল সে বিয়ে করতে পারে যদি সে চায়। আল্লাহর কসম করে বলছি, তাদের আইনের কোন ভিত্তি নেই। আমাদের এমন কিছু নেই যে যার জন্য আমাদের লজ্জা করতে হবে। আল্লাহর কসম, যদি পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণের সকল মানুষ একযােগে একসাথে রাসূলের কাজ ও কর্মে সমর্থিত কোন কাজের বিপরীতে অবস্থান নেয়, আমি তখনও বলব, তিনিই সঠিক অবস্থানে আছেন, আর বিশ্বের তাবৎ মানুষ ভুলের মধ্যে আছে। ভূমিকা: শাইখ আহমদ মুসা জিবরিল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নির্ভীকতা এবং স্পষ্টভাষিতায় সমসাময়িক আলেম ও স্কলারদের মধ্যে প্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে তাঁর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ একেবারেই বিরল। তিনি যখন কোন বিষয়ে আলােচনা করেন বা বক্তব্য প্রদান করেন স্বাভাবিকভাবেই, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এবং শক্তিমত্তার সঙ্গেই তার সেই বক্তব্যে ও আলােচনায় জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নির্ভীকতা। এবং স্পষ্টভাষিতার একত্র উচ্ছ্বাস ও সিম্ফনির উজ্জ্বল অভিপ্রকাশ ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন, তাঁর পিতা শাইখ মুসা জিবরিল রাহিমাহুল্লাহ, যিনি মদিনার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে তাঁর শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে মদিনায়। এগারাে বছর বয়সে তিনি হিফয সম্পন্ন করেন। নিম্ন মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি বুখারী ও মুসলিম শরিফ মুখস্ত সম্পন্ন করেন। তাঁর কৈশােরের বাকি সময়টুকু যুক্তরাষ্ট্রেই কাটে। পরবর্তীতে তিনিও তার বাবার মতাে মদিনার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরীয়াহর উপর ডিগ্রী লাভ করেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীনের তত্ত্বাবধানে অধ্যায়ন করেন এবং তার কাছ থেকে তাযকিয়্যাহ লাভ করেন। শাইখ বাকর আবু যাইদের কাছে একান্ত দরসে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন | আব্দুল ওয়াহহাব ও শাইখ আল-ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যার কিছু গ্রন্থ। অধ্যায়ন করেন। তিনি শাইখ মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শিনষ্কৃিতীর অধীনে চার বছর পড়াশুনা করেন। আল্লামা হামদ বিন উকালা আশ-শুয়াইবির অধীনেও তিনি অধ্যায়ন করেন এবং তাযকিয়্যাহ লাভ করেন। শাইখ মুসা জিবরিল ও শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ইলম থেকে উপকৃত হবার জন্য শাইখ বিন বায আমেরিকায় অবস্থানরত সৌদি ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ বিন বাযের কাছ থেকে তাযকিয়্যাহ অর্জন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাঁর ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় শাইখ বিন বায তাকে “শাইখ, হিসেবে সম্বােধন করেন এবং তিনি আরাে বলেন, তিনি ”আলিমদের কাছে সুপরিচিত,ও”উত্তম আক্বিদা পােষণকারী । ২য় ফ্লাপ: ইসলাম নিয়ে গর্ব কর, ইসলামের আদর্শ নিয়ে গর্ব কর। আমরা দাওয়াত ভালবাসি, আমরা দাওয়াতের জন্য সবচেয়ে ভাল ও উত্তম পথ গ্রহণ করি। অমুসলিমদের মধ্যে যারা দ্বীন জানতে চায়, তাদের জন্য আমার লেকচারগুলাে আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন। তবে যখন তারা আমাদেরকে আক্রমণ করতে চায় তখন আমরা তাদের সাথে আমরা বসতে পারি না, আল্লাহর কসম করে বলছি, তখন আমরা বলতে পারি না, আমাদের হাদিস দুর্বল, আমি কীভাবে ইলম গােপন করতে পারি, আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব তাদের সাথে আপোেষ করা? আমরা কখনই তা করতে পারব না। তাদের বাড়ি কাঁচের তৈরি, তা সত্ত্বেও সেখান থেকে তারা আমাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। তােমার। বাড়ি যেহেতু কাঁচের তৈরি, সেহেতু কাউকে তােমার পাথর মারা উচিৎ না। আমরা হিকমত ও প্রজ্ঞার কথা বলি, তবে যদি তারা আমাদের আক্রমণ করে, তাহলে আমরা তাদের দেখিয়ে দিব, যে তাদের আইনকানুনই বিশৃঙ্খল, এলােমেলাে ও হাস্যকর, আমাদেরটা না। যারা দ্বীন শিখতে চায়, জানতে চায়, তাদের জন্য আমরা আমাদের মনপ্রাণ উজাড় করে দেব, তাদের প্রতি আমরা কোমল ও সদয় হব, যারা দ্বীনকে জানতে আগ্রহী তাদের মাঝে এবং প্রাচ্যবিদেরা যারা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত অসত্তাবে আক্রমণ করে আসছে তাদের মাঝে বিশাল পার্থক্য আছে। দ্বীনের দাওয়াত ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপে পার্থক্যটা ঠিক এ জাগাতেই, তাই ইন্টারফেইথ মূলত দাওয়াতের অংশ নয়। শেষের ফ্লাপ: আয়েশা রা.-এর সাথে অল্প বয়সে বিয়ের ব্যাপারটা সেসময়ের বিচারে মােটেই নতুন কোন বিষয় ছিল না, কারণ এ বয়সে মেয়েদের বিয়ে করা তকালীন সমাজের একটি সাধারণ প্রথা ও রেওয়াজ ছিল। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও তৎকালিন সমকালকে পৃথক করে শুধু মাত্র ঘটনা বর্ণনা করা একটি মারাত্মক পর্যায়ের ভুল। এছাড়াও, আয়েশা রা. বিয়ের সময় শিশু ছিলেন না, বরং তিনি পূর্ণ সাবালিকা ছিলেন, কারণ, এর আগে তার জন্য যুবায়ের বিন মুতয়িম বিন আদির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। বাবা শাইখ মুসা জিবরিল মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলে আহমাদ মুসা জিবরিল শৈশবের বেশ কিছু সময় মদীনায় কাটান। সেখানেই এগারাে বছর বয়সে তিনি কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। বুখারি ও মুসলিম মুখস্থ করেন হাইস্কুল পাশ করার আগেই। শাইখ আহমাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৮৯ সালে হাইস্কুল পাশ করেন এবং কৈশােরের বাকি সময়টুকু সেখানেই কাটান। পরবর্তীকালে তিনি বুখারি ও মুসলিম-এর সনদ মুখস্থ করেন৷ এরপর কুতুবুস সিত্তাহর বাকি চারটি গ্রন্থও মুখস্থ করেন। শাইখ আহমাদও তাঁর বাবার মতাে মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহর ওপর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি ও আইনের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। শাইখ আহমাদমুসা জিবরিল বহু আলিমের কাছ থেকে ইলম অধ্যয়ন করেন। আঠারাে বছর বয়স হবার আগেই তিনি তাঁর বাবার কাছে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর পুরাে মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (৩৭ খণ্ডে সমাপ্ত), ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম -এর কিতাব ও ইমাম ইবনু হাযম -এর আল মুহাল্লা (১১ খণ্ডে সমাপ্ত) পড়ে ফেলেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ ইবনু উসাইমিন -এর তত্ত্বাবধানে অনেকগুলাে কিতাবের অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে অত্যন্ত বিরল তাযকিয়াহও লাভ করেন। শাইখ বাকর আবু যায়িদ -এর সাথে একান্ত দারসে তিনি আল ইমাম। ওয়াল মুজাদ্দিদ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবৃদিল ওয়াহহাব , ও শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর কিছু কিতাবও অধ্যয়ন করেন। শাইখ মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানকিতি -এর অধীনে চার বছর পড়াশােনা করেন তিনি। শাইখ আহমাদ আল্লামা হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন, তাঁর কাছ থেকে তাযকিয়াহও লাভ করেন। তিনি তাঁর বাবার সহপাঠী শাইখ ইহসান ইলাহি জহির -এর অধীনেও পড়াশােনা করেছেন। শাইখ ইহসান আমেরিকায় কিশাের শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের সাথে পরিচিত হবার পর চমৎকৃত হয়ে তাঁর বাবাকে বলেন, ইন শা আল্লাহ আপনি একজন মুজাদ্দিদ গড়ে তুলেছেন। তিনি আরাে বলেন, এই ছেলেটি তাে আমার বইগুলাে সম্পর্কে আমার চেয়েও বেশি জানে। ‘আর রাহিকুল মাখতুম’-এর লেখক শাইখ সফিয়ুর রাহমান মুবারাকপুরি -এর অধীনে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি অধ্যয়ন করেন শাইখ মুকবিল, শাইখ আব্দুল্লাহ গুনাঈমান, শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব এবং শাইখ আতিয়াহ আসসালিম (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর অধীনে। শাইখ আতিয়াহ আসসালিম ছিলেন শাইখ আল্লামাহ মুহাম্মাদ আল আমিন শানকিতি -এর প্রধান ছাত্র, শাইখ আশ-শানকিতি -এর ইন্তিকালের পর তাঁর প্রধান তাফসিরগ্রন্থ ‘আদওয়ায়ুল বায়ান’-এর কাজ তিনিই শেষ করেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর শাইখ ইবরাহিম আলহুসাইন -এরও ছাত্র ছিলেন। “আললাজনাহ আদদাইমাহ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতাহ —Permanent Committee for Islamic Research and Issuing Fatwas—এর প্রথম দিকের সদস্য শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাওদ -এর সাথে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাজ্জ করার সুযােগ লাভ করেন। এছাড়া দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষাণাবেক্ষণ কমিটির প্রধান শাইখ সালিহ আল হুসাইনের অধীনেও তিনি অধ্যয়নের সুযােগ পান। আহমাদ মুসা জিবরিল মুহাদ্দিস শাইখ হামাদ আল আনসারি ও-এর অধীনে হাদীস অধ্যয়ন করেন এবং তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। তিনি শাইখ আবু মালিক মুহাম্মাদ শাকরাহ -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন। শাইখ আবু মালিক ছিলেন শাইখ আলবানি -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শাইখ আল-আলবানি ওয়াসিয়াহতে শাইখ আবু মালিককে তার জানাযার ইমামতি করার জন্য অনুরােধ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল রবি আল মাদখালির জামাতা শাইখ মুসা আলকারনিরও ছাত্র৷ কুরআনের ব্যাপারে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ মাবাদ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে ইজাযাহপ্রাপ্ত হন। শাইখ মুসা জিবরিল ও শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ইলম থেকে উপকৃত হবার জন্য শাইখ বিন বায ও আমেরিকায় থাকা সওদি ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। শাইখ বিন বায -এর মৃত্যুর তিন মাস আগে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ব্যাপারে মন্তব্য করার সময়ে শাইখ বিন বায ও তাঁকে ‘শাইখ’ হিসেবে সম্বােধন করে বলেন, তিনি তাঁর সুপরিচিত এবং উত্তম আকিদাহ পােষণ করেন। | শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসরত আছেন।