যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগে-পরে তরুণ নেতা শেখ মুজিব নীতিতে অবিচল ও কৌশলে নমনীয় হয়ে যেভাবে প্রতিপক্ষের যুক্তিগুলােকে খণ্ডন করেছেন, তাতে তার সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। নিজ মত সুস্পষ্টভাবে বললেও তিনি দেশ ও দলের জন্য সমঝােতা করতে পিছপা হতেন না। যুক্তফ্রন্ট গঠন ও বিষয়ের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতির যে আশা-আকাঙ্ক্ষায় বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, তার সার্থক ধারক বাহক রক্ষক ছিলেন তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিব। পঞ্চাশের দশকের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে তিনি ষাটের দশকে যথাযথভাবে প্রয়ােগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুক্তফ্রন্টের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়কাল নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট শেখর দত্ত।
প্রবাদ বলে, সকা বলে দেয় দিনটা কেমন হবে। এই প্রবাদটা জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষেত্রে সর্বাংশে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পঞ্চাশের দশকে শেখ মুজিবের বয়স ছিল ত্রিশের কোঠায়। এই বয়সটাই হয় যে, যে কোনাে ব্যক্তি-মানুষ কোন অবস্থানে পৌছাতে পারবে, তা বুঝে উঠতে পারার সময়। প্রসঙ্গত '৪৮ ও '৫২-এর ভাষা-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-কল্যাণকামী জাতীয় চেতনার যে জ্বণ সৃষ্টি হয়, দেশমাতার জলের অভ্যন্তরে তা বেড়ে ওঠে পঞ্চাশের দশকে। পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিন শেখ মুজিবুর রহমান যান জেলে; শেষ দিনও তিনি ছিলেন জেলে। মাঝে এমএলএ, গণপরিষদ সদস্য, মন্ত্রী থেকে আন্দোলন, জেল, মামলা প্রভৃতির ভেতর দিয়ে রাজনীতির মধ্যমণি হয়ে উঠলেন তিনি। কি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন! সার্বিক বিচারে আমাদের জাতিসত্তার বেড়ে ওঠার সময় ছিল ওই দশক। জাতির সৌভাগ্য এই যে, জাতীয় চেতনার জ্বণ বেড়ে ওঠার ওই দিনগুলােতেই আমাদের জাতির অবিসংবাদিত নেতা ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে পােড় খেয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। ইতিহাস জাতির সাথে নেতার নিজেরা নিজেদের ভাগ্যবিধাতা হতে সক্ষম হয়েছি।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।