আকায়েদ ও আহকামের সমষ্টি হলো ইসলাম। ইসলামের মূল ভিত্তি হলো ঈমান ও আকীদা। ইসলামের বর্ণিত সঠিক আকায়েদ, ইসলামের প্রদত্ত শরীয়ত মেনে নেয়ার নাম ঈমান। ঈমান ও আকীদা সহীহ করা ব্যতীত কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারে না। ঈমান ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহ তা’আলার দরবারে কবুল হয় না। এমনকি কোনো ব্যক্তির ঈমান ও আকীদায় যদি ত্রুটি থাকে, তাহলেও তার কোনো আমল আল্লাহ তা’আলার দরবারে গৃহীত হবে না। এ কারণেই ঈমান হলো আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বান্দার উপর সবচে’ বড় ফরজ। ঈমান ও আকীদার ব্যাপারে কোনো প্রকার শিথিলতার অবকাশ ইসলামে নেই। ইসলাম মানুষকে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণেরই আহবান জানায়। কেননা, ঈমান হচ্ছে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রাসাদের ভিত্তি; যেমন বীজ হচ্ছে শাখা-প্রশাখা পথ পল্লব সমন্বিত বৃক্ষের মূল। বীজ বপন করা হলেই বৃক্ষের অংকুরোদগম হওয়ার সম্ভাবনা। বীজ রোপিত না হলে বৃক্ষের অস্তিত্ব আকাশ কুসুম। ঈমান দানা বেঁধে উঠলে ইসলাম তথা ইসলামী বিধান কার্যত অনুসৃত হবে বলে প্রত্যয় জন্মে। ঈমান হলে ইসলাম পালিত হওয়ার সম্বাবনা যেমন থাকে, তেমনি ঈমান বিহীন ইসলাম আল্লাহর আনুগত্যের ব্যবস্থা হিসাবে তার নিকট গৃহীত হয় না। ঠিক এই কারণেই আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে বান্দাদের জন্য যে বাস্তব কর্মের বিধান উপস্থাপিত করেছেন তার সবগুলোতেই তিনি সম্বোধন করেছেনঃ হে ঈমানদার লোকেরা! কিংবা হে ঐ সব লোক যারা ঈমান এনেছ’ বলে। কেননা, আল্লাহর প্রতি যার ঈমান নেই, সে আল্লাহর বিধান আদেশ বা নিষেধ পালনে প্রস্তুত হবে কেন? আল্লাহর প্রতি যার ঈমান রয়েছে সেই আল্লাহর আদেশ পালন করতে এবং তার নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে প্রস্তুত হতে পারে। আর যার তা নেই সে তা পালন করবে এমন আশা নিতান্তই অর্থহীন। দুনিয়াতে ঈমানের আহবান জানিয়েছেন আল্লাহ প্রেরিত নবী রাসূলগণ। তাদের আহবান ছিলো একক ও লা শরীক আল্লাহর প্রতি ঈমান গ্রহণের। বিশুদ্ধ ঈমানের জন্য অপরিহার্য হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন এবং যা কিছু তার আনীত বলে অকাট্যরূপে প্রমাণিত সে সমুদয়ের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। অন্তরে বিশ্বাসের সাথে সাথে মুখেও সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া। কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো বোধ-বিশ্বাস অন্তরে লালন না করা। আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে শিরোধার্য মনে করা। এই জন্য প্রকৃত মুমিন কখনই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো মতবাদ, দর্শন বা কালচারকে উত্তম, ভালো বা পালনীয় বলে বিশ্বাস করতে পারে না। কুরআন সুন্নাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়াবলীকে সে নিষিদ্ধ হিসেবেই বিশ্বাস করে। সে এ কথাও বিশ্বাস করে যে, কুরআন সুন্নাহর আলোকে যা নিষিদ্ধ তা সর্বত্রই নিষিদ্ধ। একজন মুমিন কর্মগত ভুল-ভ্রান্তির শিকার হয়ে যেতে পারে কিন্তু বিশ্বাসের ভ্রান্তিতে নিপতিত হতে পারে না। বিশ্বাসের ভ্রান্তিতে আক্রান্ত হলেই সে মুমিন নামক স্বর্ণ অভিধার অযোগ্য হয়ে পড়ে। কেননা, কর্মগত ভুল ক্ষমাযোগ্য কিন্তু আকীদাগত ত্রুটি আদৌ ক্ষমাযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে প্রাপ্য আল্লাহ তা’আলার যাবতীয় বিধানাবলী নিঃশর্তভাবে মেনে নেয়ার নাম ঈমান। তথা শরীয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকাম অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা এবং এগুলোকে নিজের দ্বীন হিসেবে বরণ করে নেয়া। মুখে স্বীকার করা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা। পরিপূর্ণ মু’মিন সেই ব্যক্তি যিনি শরীয়তের বিষয়গুলোকে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন এবং এগুলোর মৌখিক স্বীকৃতিসহ বাস্তব জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে আমল করে চলেন। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত আছে। ঈমানে মুফাস্সালের মাঝে সহজ বর্ণনায় তা পাওয়া যায়। অর্থ : আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ তা’আলার প্রতি, তার ফেরেশতাগণের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার প্রেরিত রাসূলগণের প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি, ভালো-মন্দ তাকদীরের প্রতি এবং মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন লাভের প্রতি। মানবজীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈমান। কিন্তু এই ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের অবহেলা সবচেয়ে বেশি। আশা করি গ্রন্থটি আমাদের অবহেলা দূর করণে এবং ঈমান হেফাযতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আল্লাহ তা’আলা উক্ত আশা ও প্রচেষ্ট কবুল করুন। আমীন।