কাশ্মীর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই উপত্যকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশী রক্তাক্ত এবং একইসাথে অন্ধকারাছন্ন সামরিক আগ্রাসনের শিকার এক উপত্যকার নাম। পাকিস্তান সমর্থিত ভারত বিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। কাশ্মীরের এই বধ্যভূমি যেন ছাড়িয়ে গিয়েছে ফিলিস্তিন ও তিব্বতকেও। এর সাথে যোগ করুন প্রতিদিনের অবাধ গ্রেফতার, কারফিউ, রেইড, চেকপয়েন্ট। প্রায় ৭ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে এই জুলুম। উপত্যকার চল্লিশ লাখ মুসলিমরা আজ শিকার হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ আর অকথ্য সব নির্যাতনের, যার মধ্যে আছে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক তার ঢোকানোর মত নানারকম ভয়ংকর, বর্বরোচিত টর্চার।
তাহলে কেন, কোন কারণে কাশ্মীরের এই চরম মানবিক দুর্দশাগুলো আমাদের নৈতিক চিন্তায় কেমন যেন একটা অদৃশ্য, দুর্বোধ্য রূপ নিয়ে আছে? পঙ্কজ মিশ্র, ভূমিকা থেকে…
ঘরের মাটিতে ন্যায়বিচার আর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে চালিয়ে যাওয়া কাশ্মীরিদের আন্দোলন উপেক্ষিত হয়ে আছে তাদের মাতাল রাজনীতিবিদদের কাছে, ঠিক যেমনটা এই আন্দোলন উপেক্ষার শিকার হয়ে আসছে পাকিস্তানের কাছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের এই যুদ্ধ হয়েছে বিস্মৃত, অবহেলিত। কেননা পশ্চিমা বিশ্ব নারাজি দেখিয়েছে তাদের আঞ্চলিক মিত্র ভারতের উপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে। আযাদির লড়াই (কাশ্মীর দ্য কেস ফর ফ্রীডম) বইটি হচ্ছে এই ভারসাম্যহীনতা নিরসন করার এবং আমাদের নৈতিক কল্পনাশক্তির শূন্যস্থান পূরণ করার একটি আবেগময় প্রচেষ্টা মাত্র। কাশ্মীরের অতীত-বর্তমান এবং দখলদারিত্বের কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরে লেখকবৃন্দ এই বইয়ে উচ্চকিত করেছেন ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাহার ও কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবি তুলে ধরা এক জোরালো আহবানের…
বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক, রাজনৈতিক লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও মাঠপর্যায়ের অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ের আলাপচারিতার সংকলন দানবের রূপরেখা। আলাপচারিতার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-২০০১-২০০৮। এর মধ্যে নির্ণীত হয়েছে বিশ্বব্যবস্থার নতুন রূপ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ প্রত্যেকেই প্রভাবিত হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা, আফগানিস্তান দখল, ইরাক যুদ্ধের সূচনার পাশাপাশি করপোরেট বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে খ্যাত ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, কৃষি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার হারানো, অহিংস আন্দোলনের কার্যকারিতা হারিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিস্তারও এ সময়ের ঘটনা। এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই কথা বলেছেন অরুন্ধতী রায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্ণবাদ ও ভারতে হিন্দু ফ্যাসিজমের পুনরুত্থান, পৃথিবীর অপরাপর দেশজুড়ে দুঃশাসন ও কর্র্তৃত্বপরায়ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, সাধারণ মানুষের অধিকার হ্রাস, নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি-বর্তমান বিশ্বের এই প্রবণতাগুলোও উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। তাঁর সাহস, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা আপনাকে ক্ষুব্ধ, উদ্বুদ্ধ আর আগ্রহী করে তুলবে।