"ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরী" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া: খ্যাতিমান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচি ১৯২৯ সালের ২৯শে জুন ইটালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বিশেষ করে ষাট ও সত্তরের দশকে বিশ্বের বহু দেশের। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও বিপ্লবী নেতার সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন এবং ধারাল প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তাদের আদর্শ ও কৌশলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন নির্ভীক চিত্তে। তাঁর সাক্ষাতকার নেয়া বা প্রশ্নের ধরনকে অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী মনে হতে পারে। কারণ তাঁর প্রশ্নগুলাে সাক্ষাতকারের গতানুগতিক ধারার চেয়ে বরং যাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জেরা করার মতাে ছিল। শেষ পর্যন্ত জেরার মধ্য দিয়ে সত্য তুলে আনতে সফল হয়েছেন তিনি। কৈশােরে তিনি ইটালিতে নাৎসিবিরােধী গােপন আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরেন্সে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশােনা শুরু করেন। এক বছর পরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এক সংবাদপত্রে ক্রাইম রিপাের্টার হিসেবে যােগ দেন। এরপর তিনি ফিচার লেখা ও সাক্ষাতকার গ্রহণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৫৮ সালে ইটালিয়ান ভাষায় প্রথম বই প্রকাশিত হয়, যেটির ইংরেজি নাম “দ্য সেভেন সিনস অফ হলিউড” । ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর “দ্য ইউজলেস সেক্স: ভয়েজ এরাউন্ড দ্য ওম্যান,” তার প্রথম উপন্যাস “পেনিলােপ অ্যাট ওয়ার।” ওয়ার করেসপন্ডেন্ট হিসেবে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ কভার। করেন। বিতর্কিত বিশ্বনেতাদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেই তিনি। খ্যাতির শীর্ষে উঠেন । তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে। ওতপ্রােতভাবে জড়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলী। ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধী, হেনরি কিসিঞ্জারের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন । দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পরই। অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে ইমাম আয়াতুল্লাহ খােমেনি, মুয়াম্মার গাদ্দাফী, ইরানের রেজা শাহ পাহলবী। ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাত, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী। গােল্ডমায়ার, ইথিওপিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসি, চীনের দেং জিয়াও পিং, বাদশাহ হােসেন, ভিয়েতনামের নগুয়েন ভ্যান থিউ ও জেনারেল গিয়াপ, জর্ডানের বাদশাহ হােসেন, জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট। ফালাচির নেয়া বেশ কিছু সাক্ষাতকারের সংকলিত গ্রন্থ ১৯৭৭ সালে “ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরি” নামে প্রকাশিত হয়েছে। ফালাচি কখনাে বিয়ে করেননি। তবে এক গ্রীক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তিন বছর একসাথে কাটান। এসময় তার গর্ভপাত ঘটে এবং তার এই অভিজ্ঞতা তিনি তুলে আনেন “লেটার টু অ্যা চাইল্ড নেভার বরুন”।। ১৯৯০ সালে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর | তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ওরিয়ানা ফাল্লাচি’র জন্ম ফ্লোরেন্সে, বসবাস প্রধানত নিউইয়র্কে। সাহিত্যে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে তাকে লক্ষ্য করে শিকাগাের কলম্বিয়া কলেজের ডিন বলেছিলেন, তিনি “পৃথিবীর অন্যতম বহুলপঠিত এবং বহুল-নন্দিত লেখক।” আমাদের সময়ের প্রধান প্রধান যুদ্ধগুলােতে তিনি যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন সেই ভিয়েতনাম থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরির বিপ্লব থেকে ১৯৭০’র লাতিন আমেরিকান বিদ্রোহ, ১৯৬৮ সালে মেক্সিকোর গণহত্যা (তিনি নিজে গুরুতর আহত হন তখন) থেকে শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ পর্যন্ত, সব সময়ই তিনি ছিলেন। তাঁর বইগুলাে বিশ্বের ত্রিশটি দেশে একুশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমেরিকান এই সংস্করণটি তিনি নিজেই অনুবাদ করেছেন এবং আমেরিকার জন্য কয়েকটি পৃষ্ঠা বরাদ্দ করেছেন।