ওই একটা রাত আমাদের পৃথিবীকে আমূল পাল্টে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাত।মার্চ মাসের গােড়া থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে চলছিল অসহযােগ আন্দোলন। এমন অসহযােগ আন্দোলন আর কেউ দেখেনি কোথাও। সেনানিবাস ছাড়া কোথাও কর্তৃত্ব ছিল না পাকিস্তান সরকারের। পূর্ব বাংলা চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে । অফিস-আদালত, ব্যাংক ও বিমা সংস্থা, ডাক ও তার বিভাগ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আর সবকিছুই মান্য করেছিল নেতাকে। প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত শপথবাক্য পাঠ করাননি প্রাদেশিক গভর্নরকে। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন অমােঘ ঘােষণা-এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । দেশের অধিকাংশ মানুষ চাইছিল, তিনি স্বাধীনতার ঘােষণা দিন-অনেক হয়েছে, আর পাকিস্তানে নয় । একতরফা স্বাধীনতার ঘােষণা দেননি বঙ্গবন্ধু-তার দায় নিতে চাননি। কিন্তু তিনি ঠিকই জানিয়ে দিলেন, আমরা লড়ছি স্বাধীনতার জন্যে, লড়ছি মুক্তির জন্যে। ওই যে বললাম দায় নিতে চাননি, সে-দায় তাে তাঁর একার নয়। স্বাধীনতা ঘােষণা করলে কোটি কোটি মানুষের ওপর নেমে আসত আঘাত- সে আঘাতের বাস্তব রূপ আমাদের কল্পনায়ও ছিল না। তাই ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে সংবিধান-রচনার শেষ প্রচেষ্টারূপে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলােচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন নেতারা। শাসকদের কাছে তা ছিল আঘাত হানার প্রস্তুতির জন্যে কালক্ষেপণ। প্রতারণা করেই ক্ষমতাধরেরা স্বদেশে ফিরে গেলেন ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় । যে-আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা মাসাধিককাল ধরে, তা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়ে গেলেন যাওয়ার আগে।
ফারজানা নাজ শম্পা (Farzana Naz Shampa) একজন কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। তিনি কানাডার টরেন্টোভিত্তিক কানাডিয়ান অনলাইন বাংলা পত্রিকা সিবিএন ২৪-এর সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে জড়িত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লােকপ্রশাসন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স এবং নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নােরাড ফেলােশিপ নিয়ে ‘জেন্ডার ও উন্নয়ন বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি সমাপ্ত করেন। তাঁর প্রকাশিত বহুল সমাদৃত বইটি হল জেন্ডার শব্দকোষ। জার্মানির একটি প্রকাশনাসংস্থা ভিডিএম থেকে তাঁর লেখা বাংলাদেশের গ্রামীণ-উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে।