রংবেরং গাউন শাড়ি ওড়নার খস্থস্, পালিশ করা কালো চকচকে জুতোর মচমচ, বিচিত্র কন্ঠনিঃসৃত সংলাপের ঐকতান, এখন আর নেই। রাত দশটা, একজিবিশন হলের ভারী দরোজা প্রথম দিনের মতো বন্ধ হয়ে গেল। প্রথম দিনেই পুরস্কার ঘোষণা। বিদেশী কূটনীতিবিদ, উচ্চ সরকারী কর্মচারী, গণ্যমান্য নাগরিক, সাংবাদিক ও দর্শক নারী-পুরুষে ঘরটা জমজমাট। জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনী, হয়তো তাই এতো ভিড়। উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার জন্য স্যুটপরা গাট্টাগোট্টা মন্ত্রী মহোদয় উঠে দাঁড়ালেন। ললিতকলার ভূত-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তৈরি করা কথাগুলো শেষ করবার পর বললেন, রিয়্যালি ইট ইজ মাচ এনকারেজিং দ্যাট নিউ ট্যালেন্টস্ আর কামিং ফরওয়ার্ড টু এনরিচ্ দিস্ ফিল্ড অব ন্যাশনাল গ্লোরী। এ্যাণ্ড আই এ্যাম্ রিয়্যালী হ্যাপী টু এনাউন্স দ্যাট দি পোর্ট্রেট, হুইচ স্টুড্ ফার্স্ট ইন দিস একজিবিশন, সো ফার আই রিমেম্বার, পোর্ট্রেট নাম্বার টুয়েন্টি থ্রি, ইজ নট অনলি এ গুড পীস অব আর্ট, বাট অলসো ভেরী নিয়ার টু এ মাস্টারপীস! তখন সকলের মধ্যে গুঞ্জন পড়ে গিয়েছিল। বক্তৃতা শেষ হওয়া মাত্র ছবিটা দেখবার জন্য সে কি ঠেলাঠেলি। বেশির ভাগ দর্শক ভিড় জমালো গিয়ে সেখানেই। এই সঙ্গে শিল্পীর খোঁজ নিতেও ছাড়ল না।
Alauddin Al-Azad বাংলাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক ও অধ্যাপক। আশাবাদী সংগ্রামী মনোভাব তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে নাগরিক জীবনের বিকার উপস্থাপনে আগ্রহী। তিনি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস তেইশ নম্বর তৈলচিত্র ১৯৬০ সালে ছাপা হয়। আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা : গাজী আব্দুস সোবহান; মাতা : মোসাম্মাৎ আমেনা খাতুন; স্ত্রী : জামিলা আজাদ। প্রবেশিকা : নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়, রায়পুরা (১৯৪৭)। উচ্চ মাধ্যমিক (কলা) : ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (১৯৪৯) তিনি ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি সরকারি কলেজের অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ (১৯৫৫), ঢাকা জগন্নাথ কলেজ (১৯৫৬-৬১), সিলেট এমসি কলেজ (১৯৬২-৬৮) এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬৪-৬৭)-এ অধ্যাপনা করেন। তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন এক বছর (১৯৭৪-৭৫) এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ এর ৩রা জুলাই শুক্রবার রাতে ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসভবন রত্নদ্বীপে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।