"নাইমা" লেখকের কথা: বিভিন্ন যুগ পেরিয়ে মানবজাতি এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে। এই ধাপে এসে মানবজাতির নেতৃত্ব হলো পশ্চিমাদের হাতে। তাদের ভাষা ও দর্শন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, জগৎ-সম্পর্কিত তাদের মনোভাব পুরো দুনিয়ার ওপর কর্তৃত্ব করছে। জগৎজুড়ে পশ্চিমাদের এই কর্তৃত্ব হলো তাদের দ্বিতীয় আঘাতের ফল। তাদের প্রথম আঘাত হয়েছিল শিল্প-বিপ্লবের শুরুতে। তবে তখন তাদের প্রাধান্য ছিল রাজনৈতিক দিক দিয়ে। তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব সীমাবদ্ধ ছিল অধীনস্থ জাতির অভিজাত শ্রেণি পর্যন্ত। বর্তমানে স্যাটেলাইট, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের অসাধারণ উন্নতি দুনিয়াকে সত্যিকার অর্থেই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বানিয়ে দিয়েছে। প্রচারমাধ্যমের জোরে পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা এবং চিন্তাভাবনা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের সাংস্কৃতিক ধারা, চারিত্রিক মর্যাদা এবং আকিদা-বিশ্বাসÑসবই পশ্চিমাদের দ্বিতীয় আঘাতের লক্ষ্যবস্তু। সন্দেহ নেই, এই আঘাতের প্রথম লক্ষ্য হলো আমাদের সাংস্কৃতিক ও চারিত্রিক বিষয়। তাদের শেষ লক্ষ্য যে আমাদের ধর্ম ও বিশ্বাস, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা তো একটি মৌলিক বাস্তবতা যে, এই জগতের একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি সরাসরি তা পরিচালনা করেন। তিনি তার রাসুলদের মানুষদের নিকট পাঠান, যেন তার মর্জি সম্বন্ধে তাদের অবহিত করতে পারেন। এরপর একদিন তিনি তার বিশ্বাসী বান্দাদের উত্তম প্রতিফল দেবেন এবং অবিশ্বাসীদের থেকে হিসাব নেবেন... পশ্চিমা চিন্তাধারার বাহক নাস্তিক্যবাদীদের নিকট এই বাস্তবতা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এটাকে তারা বাস্তবতা থেকে, ধর্মীয় লোকদের ব্যক্তি-বিশ্বাস কিংবা একটি কৃষ্টি-কালচার হিসেবেই বেশি মনে করে। ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা সম্বন্ধে আধুনিক দুনিয়ার এই চিন্তাভাবনা ব্যাপক ও সবার জানা। তবে বিগত দু-প্রজন্মে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা প্রবল থাকার কারণে এবিষয়গুলো ততটা প্রকাশ পায়নি। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট এবং টিভি চ্যানেলগুলোর ফলে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এসব শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম দ্বারা প্রচারিত ধর্মহীনতার মূল লক্ষ্যবস্তু হলো আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং যুবসমাজ। এই বিষয়ে তাদের মধ্যে একটি প্রশ্নের বীজ সৃষ্টি হয়েছে। এর সঠিক ও কার্যকর কোনো জবাব না এলে, যে সন্দেহ ও ধর্মবিরোধিতার বীজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, খুব শীঘ্রই একটি ব্যাপক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। পরবর্তী প্রজন্মের পড়ালেখা জানা লোকেরা আল্লাহ ও পরকালের জ্যান্ত বাস্তবতাকে মানার পরিবর্তে সেটাকে একটি কৃষ্টি-কালচার পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেবে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আমি সমাজবিজ্ঞানেরও ছাত্র। সমাজের পরিবর্তন সম্বন্ধে আমার বেশ জানা আছে। ভালোভাবেই আমি বুঝতে পারছি কী পরিবর্তন আসছে, এবং কী পরিবর্তন আসবে। তাই জবাব দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। এরপর জবাব দিলে তা ততটা কার্যকর হবে না। যুবসমাজকে রক্ষা করার এটাই সময়। এই উপন্যাসে কুরআন মজিদের মূল প্রমাণ উপস্থান করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি দিক থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরও দিতে চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো হলো সেসব প্রশ্ন, যেগুলো অনেক বছর ধরে মানুষ আমার নিকট করে আসছে। আমি জানি, প্রত্যেক জবাবের পরই নতুন প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবুও যেসব প্রমাণ কুরআন থেকে নেওয়া হয়েছে এবং যেগুলো চতুর্থ অধ্যায় থেকে শুরু হবে, তা একটি মুজেযা। সেটার জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। সেটার বর্ণনাই আমার লক্ষ্য। অন্যগুলো আনুষঙ্গিক আলোচনা। তথ্য ও প্রযুক্তির বর্তমান যুগে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি অবিশ্বাসের বীজ কোনো তাত্ত্বিক জ্ঞানের আকারে প্রচার হচ্ছে না; বরং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের নব প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরা হচ্ছে। এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমিও সরাসরি তাত্ত্বিক কিছু লিখিনি; বরং তাদের পদ্ধতিই গ্রহণ করেছি। একটি আকর্ষণীয় গল্পের আকারে যুবসমাজের নিকট তা পৌঁছাতে চেষ্টা করেছি, যারা সাধারণত দীন থেকে অনেক দূর রয়েছে।