পাওলো কোয়েলহো স্বীয় জীবনই তার পুস্তকসমূহের অনুপ্রেরণার মূল উৎস। মৃত্যুর সাথে সখ্য, পাগলামো থেকে বিমুক্তি, মাদক নিয়ে মাতামাতি, নিপীড়ন সহ্য করা, জাদু ও রসায়নবিদ্যায় অভিজ্ঞতার্জন, দর্শন ও ধর্মবিদ্যা অধ্যয়ন, গোগ্রাসে পাঠাভ্যাস, বিশ্বাস হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়া এবং ভালোবাসায় যুগপৎ বেদনা ও আনন্দের অভিজ্ঞতা ঘটেছিল তার জীবনব্যাপী। পৃথিবীতে স্বস্থান সন্ধানে সবাই যেসব পরীক্ষার সম্মুখীন হয় তিনি সেগুলোর উত্তর আবিষ্কার করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন স্বীয় গন্তব্যপথ খুঁজে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি নিজ সত্তার মাঝেই নিহিত। তার সর্বসাম্প্রতিক উপন্যাস, এডাল্টেরি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক বিক্রিত গ্রন্থ। ১৯৮৮ সালের উপন্যাস দ্য আলকেমিস্ট ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পাওলো কোয়েলহোর ২০০ মিলিয়ন বই বিক্রিত। ৮১টি ভাষায় তার সৃষ্টিকর্ম অনূদিত হয়েছে, যা বিশ্বের জীবিত সাহিত্যিকদের মধ্যে সর্বাধিক বলে বিবেচিত। স্বাধীনচিত্ত নারী হতে চাওয়াই তাঁর একমাত্র অপরাধ... মাতা হারি কপর্দকশূন্য অবস্থায় প্যারিস এসেছিলেন। মাসখানেকের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন শহরের সবচাইতে খ্যাতিমান নারী। নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিবেশনায় তিনি দর্শকদের একাধারে প্রচ- ঝাঁকি ও আনন্দদান করেছেন। বারবণিতা হিসেবে তিনি সে যুগের অত্যন্ত ধনী এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মোহগ্রস্ত করেছিলেন। মাতা হারির যাপিতজীবন যুদ্ধভ্রমগ্রস্ত দেশে তাঁকে সন্দেহভাজনে পরিণত করে। ১৯১৭ সালে চ্যাম্পস-ইলেসিসের হোটেলকক্ষ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মাতা হারির সর্বশেষ পত্রানুসারে রচিত দ্য স্পাই যেন তাঁরই কণ্ঠস্বর। এ উপন্যাসটি চলতি প্রথাকে অস্বীকার করবার সাহস করে চরম মূল্য প্রদানকারী এক নারীর অবিস্মরণীয় আখ্যান।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।