"সৌন্দর্য শিল্পকলা ও নন্দনতত্ত্ব -৫ম খণ্ড" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ঐতিহ্যগতভাবে নন্দনতত্ত্ব সুন্দর নিয়ে আলোচনা করে, সৌন্দর্যের আদর্শ নির্ণয় করতে চায়, সুন্দরের স্বরূপ নির্ণয় করতে চায় এবং সৌন্দর্যের আলোকে মানবাচরণের মূল্যায়ন করে। এ কারণেই নন্দনত্ত্বকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে অভিহিত করা হয়। এই নন্দনতত্ত্ব কান্তিবিদ্যা, সৌন্দর্যদর্শন, শিল্পদর্শন, শিল্পসমালোচনা, শিল্পবিজ্ঞান এবং সৌন্দর্যবিদ্যা প্রভৃতি নামেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। আমাদের ভারতবর্ষে বিষয়টি আবার অলঙ্কারশাস্ত্র নামেও ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, মানুষের জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োজনটাই সবকথা নয়, অপ্রয়োজনের প্রয়োজনও মানবজীবনে অপরিহার্য। মানুষ কেবল কাজের কাজ করে পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারে না। অনেক সময় অকাজের কাজেও মানুষ পরম তৃপ্তি লাভ করতে পারে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং নিরাপত্তার জন্য মানুষের কাজকে বলে প্রয়োজনীয় কর্ম। মানবেতর প্রাণীও এ ধরনের প্রয়োজনীয় কর্ম পালন করে থাকে। কিন্তু মানুষকে এ ধরনের প্রয়োজনীয় কর্ম ছাড়া আরও নানা ধরনের কর্ম পালন করতে হয়। এ ধরনের অপ্রয়োজনের কর্মের মাধ্যমেই মানুষের অন্তস্থ নান্দনিকতা প্রকাশ পায়। এদিক থেকে বিচার করলে মানবপ্রজাতির ইতিবৃত্তকে সৌন্দর্যবিচারের ইতিবৃত্ত বলেই আখ্যাত করা যায়। সভ্যতার আদিপর্ব থেকেই মানুষ নানাভাবে ও নানা প্রক্রিয়ায় নিজ অঙ্গকে সাজিয়ে আসছে; অন্যান্য কাজকে উপেক্ষা করে মানুষ তার গৃহপ্রাঙ্গণকে কুসুমবৃক্ষের আবরণ দিয়ে সাজিয়েছে। এজন্যই মানুষ তার প্রিয়জনের মুখপানে বিষণ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করে আসছে। এভাবেই যুগে যুগে মানুষ নানা ধরনের ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য স্থাপন, নৃত্য, সঙ্গীত এবং কাব্যসাহিত্য প্রভৃতি শিল্পকর্মের মাধ্যমে সৌন্দর্যের গলে বরমাল্য পরিয়েছে। শিল্পকর্মের উল্লিখিত প্রতিটি শাখাতেই মানুষ সুন্দরকে বিমোহিত চিত্তে খুঁজে বেড়িয়েছে। আজ পর্যন্ত মানুষের এই সৌন্দর্য বিজয়ের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মানুষ ধরে নিয়েছে সৌন্দর্যের গুণাগুণ মূল্যায়ন করা যায়, সুন্দরের উপলব্ধি করা যায় এবং সুন্দরের প্রশংসাও নির্মোহচিত্তে করা যায়; কিন্তু সুন্দরকে উপভোগ করতে গেলেই যাবতীয় বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। বর্তমান প্রকল্পিত, সঙ্কলিত ও সম্পাদিত সৌন্দর্য, শিল্পকলা ও নন্দনতত্ত্ব শিরোনামে উপস্থাপিত গ্রন্থের প্রতিটি খণ্ডের প্রতিটি প্রবন্ধেই এই সত্য অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।