আলাদা প্রকৃতির, ভিন্ন চিন্তার দুজন মানুষ যখন একই ছাদের নিচে একই কামরায় সহাবস্থান করে তখন মনোমালিন্য, কলহ-বিবাদ হওয়া অতি স্বাভাবিক। পৃথিবীজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এসব বিষয় তিক্ত সত্যি, অতি সাধারণ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ। অথচ এই অতি সাধারণ অনুষঙ্গই কখনো কখনো ডেকে আনে অস্বাভাবিক পরিণতি। সামান্য মান-অভিমান বা মন-কষাকষি থেকে শুরু হওয়া বিবাদ একসময় হয়ে ওঠে দুটো জীবনের অনিশ্চিত গন্তব্যের কারণ। আবার পরিবারের সীমিত গণ্ডির জীবনযাপনে আমাদের মুখোমুখি হতে হয় বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন শ্রেণির আলাদা চিন্তাচেতনার মানুষের। অন্তর্দ্বন্দ্ব, কলহ-বিবাদ তাদের সঙ্গেও হয়। পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে মানবজীবনের খুঁটিনাটি সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে। পারিবারিক এসব সমস্যা ও সংকটের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপত্র সাড়ে চোদ্দশ বছর আগেই ইসলাম মানবজীবনের সামনে প্রস্তাব করেছে। নবিজীবন ও সাহাবিজীবনকে উপলক্ষ করে সেসব সমাধান বিবৃত হয়েছে সহজ ও সরল বয়ানে। চলতি পথে যদি কখনো মনোমালিন্য হয়, যদি কখনো খেই হারায় মেজাজ; কিংবা যদি নেহাত অপছন্দনীয় কাজের মুখোমুখি হতে হয়—কী করণীয় তখন —কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সে কথাগুলোই উঠে এসেছে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে। একজন দরদি মানুষের, একজন চিন্তক ব্যক্তির, সর্বোপরি চলমান পৃথিবীর দুরবস্থা ও সংকট সম্পর্কে সচেতন ও ব্যথিতপ্রাণ একজন প্রাজ্ঞ আলিম শায়খুল ইসলাম বিচারপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানির প্রেমময় শব্দবন্ধে উঠে এসেছে পারিবারিক জীবনকে শান্তিময় করা ও দুনিয়া-আখিরাতে সফল হওয়ার অনিন্দ্য-সুন্দর ইসলামি সমাধান। জীবনের এই দুর্বিনীত ঝঞ্ঝায় নাকাল পাঠক বইটি সমাপ্ত করার পর উপলব্ধি করবেন—
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।