"জাতীয়তাবাদ” বইয়ের লেখকের কথা: পাশ্চাত্য যখনই প্রাচ্যের কোন নৃগোষ্ঠীর উথানের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করে তখনই তার মনে একটা ভয়ের সঞ্চার হয়। ভয়ের কারণ হলো পাশ্চাত্য যে শক্তি দ্বারা চালিত তা একটি অশুভ শক্তি। যতক্ষণ এই অশুভ শক্তিকে পাশ্চত্য নিজের পাশে রাখতে পারে ততক্ষন সে নিজে বিপদমুক্ত থাকে এবং জগতের অন্যান্য জাতিগুলো তার ভয়ে কাপতে থাকে। ইউরোপের বর্তমান সভ্যতার মুখ্য উচ্চাশা হল শয়তানকে একচ্ছত্র হিসাবে নিজের পক্ষে রাখা। শুধু এই একটি উদ্দেশ্যেই তার সকল অস্ত্রশস্ত্র ও কূটনীতি গড়ে তোলার প্রয়াস। কিন্তু অশুভ শক্তিকে আহ্বান করার সমস্ত ব্যয়সাপেক্ষ ক্রিয়াকর্ম যে জাগতিক বৈভবের পথ ধরে চলে তা শেষ পর্যন্ত চরম বিনাশের কিনারে এসে পৌছয়। ইশ্বরের পৃথিবীতে পাশ্চত্য যে সন্ত্রাসের উন্মত্ততা নিয়ে এসেছে তা তাকেই গ্রাস করার জন্য ফিরে এসেছে এবং আরো বড় আকারের ভয়াবহ অবস্থার প্রস্তুতি নিতে তাকে বাধ্য করছে। এর ফলে সে কোন বিশ্রাম পায় না। অপরের প্রতি ধংস যে নিয়ে আসে এবং সেইসংঙ্গে নিজের ধংসও সে ডেকে আনে। সেটা ছাড়া আর সবকিছুই সে ভুলে যায়। রাজনীতির শয়তানের উপসনা করতে গিয়ে পাশ্চাত্য অন্য জাতিগুলোকে বলি দেয়। পাশ্চাত্য তাদের মৃতমাংস খেয়ে বলবৃদ্ধি করে নিজে স্ফীত হয়ে ওঠে যতদিন পর্যন্ত মৃতদেহগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য থাকে। কিন্ত অবধারিতভাবে সেগুলো পঁচে যায়, চারদিক দূষিত হয় এবং খাদ্য সরবরাহকারীর প্রাণশক্তি বিষদুষ্ট করে। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।